বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিয়ানমারে সংবিধান সংশোধনে কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাস

মিয়ানমারের পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়েছে। সেনা সমর্থিত আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও গতকাল প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাস হয়। সংবিধানে বড় ধরনের কোনো সংশোধনী এলে তা দেশটির সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে খর্ব করতে পারে বলেও অনেকের ধারণা। মিয়ানমারের এখনকার সংবিধান ২০০৮ সালে গৃহীত হয়। অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক জান্তা সরকারের আমলে রচিত এ সংবিধানকে ‘অগণতান্ত্রিক’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে। সংবিধানের কিছু অংশের পরিবর্তনে এনএলডি পার্লামেন্টে একটি ‘জরুরি প্রস্তাব’ উত্থাপন করলে গতকাল তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ৬১১ আইনপ্রণেতার মধ্যে ৪১৪ জনই পক্ষে ভোট দিলে সংবিধান নিয়ে আলোচনায় কমিটি গঠনের পথ সুগম হয়। তিন বছর আগের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এটাই এনএলডির প্রথম কোনো পদক্ষেপ যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। এনএলডির উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তির বিষয়টি গোপনও রাখেননি সেনা মনোনীত আইনপ্রণেতারা। প্রস্তাবের বিরোধিতায় পার্লামেন্টে কয়েক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। রয়টার্স

 রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনা অভিযান নিয়ে দেশটির সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের ওপর প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই গতকাল সংবিধান সংশোধনে কমিটি গঠনের এ প্রস্তাবটি পাস হলো। মিয়ানমার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ও এনএলডি সাংসদ টুন টুন হেইন সংবিধান সংশোধনের আলোচনায় গঠিত নতুন কমিটির সভাপতিত্ব করবেন বলে স্পিকার টি কুন মিয়াত জানিয়েছেন। ‘রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও সামরিক আইনপ্রণেতাদের মধ্য থেকে আনুপাতিক হারে (সংবিধান) সদস্য কমিটিতে যুক্ত করা হবে, বলেছেন তিনি। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। অন্যদিকে যে কোনো সংশোধনীর জন্য পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ বিধানের ফলে সামরিক বাহিনীর সায় ছাড়া কার্যত কোনো সংশোধনীই গৃহীত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পার্লামেন্টে ‘জরুরি প্রস্তাব’ নিয়ে ভোটাভুটির আগে মঙ্গলবার এনএলডির সাংসদরা বলেন, সংবিধান সংশোধনে জনগণের সমর্থন আছে। কমিটি গঠিত হলে সব দলই এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে বলেও আশ্বাস দেন তারা। সেনা ঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) আইনপ্রণেতারা সংবিধান সংশোধনের ধারা মেনে ‘জরুরি প্রস্তাবটি’ উত্থাপিত হয়নি বলে অভিযোগ করেন। মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধানে বিদেশি স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানধারী কারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা আছে। মৃত ব্রিটিশ স্বামী মিশেল আরিসের ঘরে দুই ছেলে থাকায় তিন বছর আগের নির্বাচনে এনএলডির অভূতপূর্ব বিজয় হলেও সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তার দল অবশ্য সংবিধানের কোন কোন অংশের সংস্কার চায় তা এখনো খোলাসা করেনি।

সর্বশেষ খবর