শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদায় বেলায় কান্দাহারে তালেবানদের ওপর বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের

বিদায় বেলায় কান্দাহারে তালেবানদের ওপর বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের

আগামী মাসেই আফগানিস্তান থেকে প্রায় সব সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে আমেরিকা। তবু বিদায়বেলাতেও আফগান সেনাকে সহায়তা করতে তালেবানদের বিরুদ্ধে হামলা চালাল। কান্দাহার প্রদেশে ড্রোন প্রযুক্তির সাহায্যে তালেবানদের দখল নেওয়া এলাকায় স্থাপনা ও অস্ত্রাগারে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন    সেনা। আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেসকে (এএনডিএসএফ) সাহায্য করতে এই হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। আফগান প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ দিনে ৬ থেকে ৭টি হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনা, যার বেশিরভাগই ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আগে এর থেকে অনেক বেশি নিয়মিতহারে হামলা চালাত তারা। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি জানান, ‘আমি এটুকু বলতে পারি শেষ অনেকগুলো দিনে এএনডিএসএফ-এর সাহায্যার্থে আমরা আকাশপথে হামলা চালিয়েছি, তবে এর বিশদ টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে ঢুকতে পারব না।’

জানা গেছে, শেষ ৪টির অভিযানের মধ্যে ৩টিতে তালেবানদের দখল নেওয়া অস্ত্রশস্ত্র এবং সাজ সরঞ্জামকে লক্ষ্য করে বোমা ফেলা হয়েছে। এসব অস্ত্রশস্ত্র আমেরিকান সেনার তরফে আফগান সেনাকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার দখল নিয়ে নেয় তালেবানরা। এ ঘটনা থেকেই পরিষ্কার, সাম্প্রতিক সময়ে কীভাবে আফগানিস্তানে শক্তি বাড়াচ্ছে উগ্রপন্থি গোষ্ঠীটি।

আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আগস্ট মাসের মধ্যে বাকি সব সৈন্য ফিরে আসবে। কিন্তু তার আগেই আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান,  ইরানের সীমান্তে অবস্থিত সেনাঘাঁটি আগেই তাদের দখলে চলে গেছে, সম্প্রতি পাকিস্তান সীমান্তে স্পিন বোলদাক সেনাঘাঁটিও তালেবানরা দখল করে নিয়েছে।

আফগান বাহিনীর রণকৌশল বদল : তালেবানের কাছে কয়েকটি বড় পরাজয়ের পর কৌশল পাল্টাচ্ছে আফগান বাহিনী। আফগান ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাবুলের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর, সীমান্ত চেকপোস্ট এবং অবকাঠামোকে কেন্দ্র করে সেনা মোতায়েন করার কথা ভাবছে সরকার।

এমন কৌশলের ফলে অন্য অনেক অঞ্চল তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিভিন্ন প্রদেশের রাজধানীকে রক্ষার মাধ্যমে দেশটিতে বিভাজন এড়াতে এর বিকল্প নেই। এর আগে কৌশল পাল্টানোর বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেলেও এত বিস্তারিত জানা যায়নি।  ৩১ আগস্টের আগে অর্থাৎ সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আগেই এই নতুন কৌশল কার্যকর করতে চায় আফগান সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে এসব তথ্য।

তালেবান এরই মধ্যে আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চলের দখল নিয়েছে। পেন্টাগন বুধবার জানিয়েছে, দেশটির অর্ধেকের বেশি জেলা এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। অর্ধেকেরও বেশি প্রাদেশিক রাজধানীকে কাবুল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যাপক চাপ প্রয়োগও করছে তালেবান।

মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গোয়েন্দাদের ধারণা ছয় মাসের মধ্যে আফগান সরকারের পতনও ঘটতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আফগান কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেনাসদস্যদের অল্প কিছু জায়গায় জড়ো করলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং অবকাঠামো (যেমন ভারতের সহায়তায় নির্মিত একটি বাঁধ) এবং মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সম্ভব হবে।

কিন্তু বিশেষ বিশেষ জায়গায় সেনা জড়ো করার মানে হচ্ছে অন্য এলাকাগুলোকে অরক্ষিত রেখে দেওয়া এবং সেসব এলাকার বাসিন্দা বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তালেবানের হাতে ছেড়ে দেওয়া। আফগান কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত মানুষের সামনে কীভাবে তুলে ধরবেন? স্বাভাবিকভাবেই মানুষ খুব ভীত। একের পর এক অঞ্চলের দখল নিচ্ছে তালেবান।’

মার্কিন জেনারেল মার্ক মাইলি বলেছেন, তালেবান ‘কৌশলগতভাবে এগিয়ে রয়েছে’। নতুন কৌশলে জেলার কেন্দ্র সমর্পণ করে কাবুলের মতো বেশি জনসংখ্যার কেন্দ্রগুলোতে বেশি নজর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, ‘তালেবানের পুরোপুরি ক্ষমতা দখল বা অন্য যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।’

সর্বশেষ খবর