করোনা মহামারী মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনার জেরে সহিংস বিক্ষোভের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত করেছেন। রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট সাইদ ৩০ দিনের জন্য সাময়িক স্থগিত করেছেন পার্লামেন্ট। দেশটির বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ অভিহিত করেছেন। করোনা মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনায় তিউনিসিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। এ ক্ষোভ থেকে গতকাল তিউনিসিয়ার রাজপথে নেমে আসেন হাজারো বিক্ষোভকারী। দেশজুড়ে এ বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তের পর প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্য দিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।
রবিবার জরুরি নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। এরপর টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘তিউনিসিয়ায় যতক্ষণ সামাজিক শান্তি ফিরে না আসবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাষ্ট্রকে নিরাপদ না করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ পার্লামেন্ট স্থগিত থাকবে।’ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হিশামকে বরখাস্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এ অবস্থায় রাজধানী তিউনিসে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
এক ফেসবুক পোস্টে প্রেসিডেন্ট সাইদ বলেন, ‘তিউনিসিয়া ও তার জনগণকে বাঁচাতে আমি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, সংবিধান তাকে সংসদ বিলুপ্ত করার অধিকার দেয়নি। তবে আর্টিক্যাল ৮০ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সংসদ স্থগিত করতে পারেন। ওই আর্টিক্যালে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন বিপদ’ দেখলে প্রেসিডেন্ট সংসদ স্থগিত করতে পারেন।বহুদিন ধরেই দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশি সংসদের সবচেয়ে বড় দল এনাহদার সদস্য। আর প্রেসিডেন্ট সাইদ একজন স্বতন্ত্র রাজনীতিবিদ। ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। এর পর থেকে প্রধানমন্ত্রী ও এনাহদা দলের প্রধান রশিদ গানুশির সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে বিবাদে জড়ান প্রেসিডেন্ট সাইদ। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণে মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ, করোনা মোকাবিলা এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হয়েছে।
তিউনিসিয়ায় সম্প্রতি করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বেড়েছে। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে করোনায় প্রায় ১৮ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় বিক্ষোভের মাধ্যমে তৎকালীন একনায়ক বেন আলীকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। এর পর থেকে গত ১০ বছরে নয়টি সরকার গঠিত হয়েছে।
আলজাজিরার কার্যালয় বন্ধ : তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার কার্যালয়ে বিনা নোটিসে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সংবাদকর্মীদের জোর করে বের করে দিয়েছে তারা। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস।