বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরতে শুরু করেছেন তালেবান নেতারা

বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরতে শুরু করেছেন তালেবান নেতারা

তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ

তালেবানের কাবুল জয় হয়েছে চার দিন। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ওই দিন দেশ থেকে পালিয়ে যান। দেশটি এখন তালেবানের কব্জায় হলেও আপাত দৃষ্টিতে কোনো সরকার নেই। এ অবস্থায় সরকার গঠনের বিষয়ে বসছে তালেবান ও দেশটির প্রতিনিধিরা। এদিকে তালেবান নেতারা এখন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। তারা বিশ্বকে তাদের ইতিবাচক মানসিকতার বার্তা পৌঁছে দিতেও কাজ শুরু করেছে। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বিশ্বের সামনে নিজেদের তুলে ধরতে শুরু করেছেন তালেবান নেতারা। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকরা এ ব্যক্তির বক্তব্য পেতেন, কিন্তু কখনো তাকে দেখতে পাননি।

জ্যেষ্ঠ এ নেতা জানিয়েছেন, তালেবান সদস্যদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা বিজয় উদযাপন না করেন। সেই সঙ্গে বেসামরিক ব্যক্তিদের অস্ত্র ও গুলি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে বলেছেন, সমাজে নারীদের অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা থাকবে। তাদের ইসলামিক আইনের ভিতরে কাজ করতে অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি জানান, তার গ্রুপ নতুন সরকার গঠনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তা সম্পন্ন হলেই নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে ইসলামিক আইনের অধীনে নারীদের কাজ করতে দেওয়া হবে বলতে কী বুঝিয়েছেন তার   বিস্তারিত বলেননি। যেসব কন্ট্রাক্টর এবং দোভাষী বিদেশি শক্তির সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলেছেন, কারও বিরুদ্ধেই প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিডিয়ার ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। পাশাপাশি বেসরকারি মিডিয়া অবাধ ও নিরপেক্ষতা পাবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত নয় মিডিয়ার। আল কায়েদার যোদ্ধা বা অন্য কট্টরপন্থিদের অবস্থান আফগানিস্তান হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলেছেন, কখনো কারও বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করা হবে না। জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ২০ বছর লড়াই করে আমরা বিদেশি শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়েছি। এটা পুরো জাতির জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমরা নিশ্চিত করতে চাই আফগানিস্তান আর যুদ্ধক্ষেত্র নয়। যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা দেশে-বিদেশে কোনো শত্রু চাই না।

হাক্কানি নেতার সঙ্গে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্টের বৈঠক : তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন, তালেবানের সঙ্গে জড়িত হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঊর্ধ্বতন নেতা ও সামরিক কমান্ডার আনাস হাক্কানি আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের শান্তি দূত আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ কাবুলের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তালেবান একটা সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়াস আরও জোরদার করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এ বৈঠকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তবে তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। কিছু আফগান, সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, যে হাক্কানিকে ২০১৬ সালে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল, তিনি দুজন শীর্ষ আফগান নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন এ ছবি দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন। আনাস হাক্কানি হাক্কানি নেটওয়ার্কের বর্তমান প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই। হাক্কানি নেটওয়ার্ক আমেরিকার সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠী পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকায় তালেবানের আর্থিক এবং সামরিক সম্পদের দেখভাল করে। হাক্কানি নেটওয়ার্ক এলাকার অন্যতম সবচেয়ে শক্তিশালী উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, যে গোষ্ঠীকে সবাই ভয় পায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগান বাহিনী এবং তাদের মিত্র বাহিনীর সদস্যদের ওপর সবচেয়ে সহিংস হামলা চালিয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

আনাস হাক্কানিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। কাবুলে কর্মরত পশ্চিমা দেশের দুজন অধ্যাপককে সে সময় মুক্তি দেওয়া হয় আনাস হাক্কানিসহ দুজন কট্টরপন্থি জঙ্গির মুক্তির বিনিময়ে।

সর্বশেষ খবর