আগস্টের ১৫ তারিখ আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বের একটি রাষ্ট্রও তাদের কথিত ইসলামী আমিরাতকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তালেবান চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি। সংগঠনটির নেতারা প্রথম থেকেই প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর কাছে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলে চলেছেন তারা। সংস্থাটি আশ্বাস দিয়েছে তারা আফগানিস্তানে সাহায্য অব্যাহত রাখবে। যদিও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দিতে তালেবানকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ব্রিটেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে তালেবান নেতারা। তবে স্বীকৃতি না দিলেও আফগানিস্তানে সাহায্য পাঠাচ্ছে চীন, উজবেকিস্তান, কাতার, আরব আমিরাত ও পাকিস্তান। তালেবানের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া এখন সব থেকে জরুরি। যতদিন না তাদের আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে বিশ্ব মেনে নিচ্ছে, ততদিন তারা বিদেশে আটকে থাকা অর্থ ছাড় পাচ্ছে না। আফগানিস্তানের সব মিলিয়ে ৯.৫ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে আটকে আছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আফগানিস্তানকে ঋণ প্রদানও বন্ধ করে দিয়েছে। যারা আফগানিস্তানে সাহায্য পাঠাচ্ছে তারাও অর্থ না পাঠিয়ে সরাসরি খাবারসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য পাঠাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে তালেবানকে কেউ বিশ্বাস করছে না।
প্রায় ১০ বছর আগে প্রথম কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে তালেবান। সেসময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শান্তি আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সংগঠনটি।
২০১১ সালে কাতারের রাজধানী দোহাতে আস্তানা গাড়ে তালেবানের কয়েক নেতা। এরপর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করতে সক্ষম হন তারা। যদিও সেসব আলোচনা তেমন কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তালেবানের কূটনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে একে তাদের সঙ্গে বসেন উজবেকিস্তান, ইরান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, চীন ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা। এমনকি তালেবান প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দেশ সফর করতে শুরু করেন। এমন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে সক্ষম হয় তালেবান।
যদিও আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এসব রাষ্ট্র তালেবানকে আর আগের মতো করে দেখছে না। দীর্ঘদিন ধরেই ইরান তালেবানকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছিল। কিন্তু এখন তারাও তালেবানের বিষয়ে রহস্যময় ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করেছে। গত ২৮ আগস্ট ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করবে তালেবানের আচরণের ওপর।
ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালেবানের নেতৃত্ব অনেক নমনীয় গলায় কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা যা বলছেন তা নিয়ে তারা অতিরিক্ত সতর্কতা দেখাচ্ছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারী অধিকারের মতো ইস্যুগুলোতেও তারা পশ্চিমাদের আশ্বস্ত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মানবাধিকার গোষ্ঠী ও সাধারণ আফগানরা বলছেন, দেশের মধ্যে তালেবান মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। এর মধ্যে গতকাল আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের একটি মসজিদে শক্তিশালী বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। যা তালেবান সরকারকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।