ইরানের অস্কার বিজয়ী ছবি ‘দ্য সেলসম্যান’। ২০১৬ সালে ছবিটি অস্কার পায়। এই ছবির অভিনেত্রী তারানেহ আলিদোস্তি। এবার তাকে গ্রেফতার করেছে ইরান সরকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চলমান আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, শনিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন মাস আগে পুলিশি হেফাজতে মারা যান কুর্দি তরুণী জিনা মাশা আমিনি। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। প্রতিবাদের এই ঢেউ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। এমনকি বিশ্বকাপ ফুটবলকেও স্পর্শ করেছে। এতে সমর্থন দিয়ে নিজের ইনস্টাগ্রামে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছিলেন আলিদোস্তি।
ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া ও বিকৃত আধেয় (কনটেন্ট) প্রকাশের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তারানেহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারানেহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবশেষ পোস্ট দিয়েছেন ৮ ডিসেম্বর। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আপনাদের নীরব থাকার মানে হলো দমন-পীড়ন ও দমন-পীড়নকারীদের সমর্থন করা।’
একই দিন ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে মোহসেন শেকারি নামের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।
আর ওই যুবক সম্পর্কে আলিদোস্তি লিখেছেন, তার নাম মোহসেন শেকারি। এই রক্তপাত যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন দেখছে এবং কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তাদের সবার জন্য এটা মানবাধিকার অবমাননার, নিন্দার।
এই পোস্ট দেওয়ার পর গত সপ্তাহ থেকেই আলিদোস্তির অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। অভিযোগের পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি এমন অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কৈশোর থেকেই ইরানি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি ‘লিলাস ব্রাদারস’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শন করা হয়। কঠোর পর্দাবিধি মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনিকে (২২) গ্রেফতার করে নীতি পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশি হেফাজতে ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
নির্যাতনে মাশার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ইরানের মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। মাশার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। চলমান বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ বলে অভিহিত করে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে ইরানের কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন হাজারো ব্যক্তি। এ ছাড়া বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই দুজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মাশার মৃত্যুর দিনই অভিনেত্রী তারানেহ তার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন : ‘এই বন্দিত্ব নরকের মতো’। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেওয়া ক্যাপশনে তারানেহ লেখেন, ইরানের নারীরা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা ভুলে যাবেন না। মানুষকে সব জায়গায় মাশার নাম ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেছিলেন, মাশার নাম বলুন, বিশ্বে ছড়িয়ে দিন।
এদিকে বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার আরও ৯ ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ইরান। গত মঙ্গলবার ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে ৪০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের কারও কারও সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হয়েছে।