ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। এই দুই ভূমিকম্পের ফলে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে দেশ দুটির প্রায় লাখো মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া জীবিতদের উদ্ধারে ও বাস্তুচ্যুতদের সাহায্যার্থে ব্যাপক একটি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিকে তুরস্কে ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩ দিন পর আরও তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা। যার মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রায় ২৯৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া ওই তিনজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের আন্তাকিয়া শহরের কানাতালি অ্যাপার্টমেন্টের নিচে পাওয়া যায়। অন্যদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ার নিহতদের জন্য বিশ্বব্যাপী গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্যোগের ব্যাপকতার কারণে বহু নিহতকে দাফন অনুষ্ঠান ছাড়াই কবর দেওয়া হয়েছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চিরতরে চাপা পড়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বহু আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্প বিধ্বস্ত বিশাল অঞ্চলটি থেকে চলে গেলেও সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে জীবিতরা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে বের হয়ে আসছেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর অধিকাংশ উদ্ধারের ঘটনা-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে। তারপরও হাইতিতে ২০১০ সালে ব্যাপক একটি ভূমিকম্পের ১৫ দিন পর এক কিশোরীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। তাই তুরস্কের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও মানুষ উদ্ধার হতে পারেন বলে আশা রয়ে যাচ্ছে। তুরস্কে মৃতের সংখ্যা এখন ৩৯,৬৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে এটি আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধসে পড়ায় এবং বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫,৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা একই আছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার পরিস্থিতি আগেই থেকেই নাজুক ছিল, ভূমিকম্পে তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। ভূমিকম্পে সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের অধিকাংশ ঘটনাই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ঘটেছে। এই বিদ্রোহীরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত আছে। এ সংঘাতের কারণে দেশটির ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোয় জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার রাতভর সেখানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আতারেব শহরে সরকারি বাহিনীগুলো গোলাবর্ষণ করেছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। -আলজাজিরা