বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে গুচ্ছ বোমার উৎপাদন, মজুদ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এ বোমার উৎপাদন, মজুদ ও ব্যবহার বন্ধে বিশ্বের ১২৩টি দেশ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া এ চুক্তিতে সই করেনি। এ গুচ্ছবোমাকে ‘অমানবিক হাতিয়ার’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সেই হাতিয়ার বা নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার শুরু করেছে ইউক্রেন। ফলে দেশটি ইতোমধ্যে বিতর্কে পড়ে গেছে। কিয়েভকে এই ভয়াবহ হাতিয়ার দিয়েছে আমেরিকা।
বিবিসি জানায়, ‘কাউন্টার অফেন্সিভ’ বা পালটা আক্রমণে ইউক্রেনীয় সেনা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। হোয়াইট হাউস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ইউক্রেন নিজ ভূখন্ডে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্লাস্টার বা গুচ্ছবোমা ব্যবহার করছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে রাশিয়ানদের অবস্থান বা অভিযানকে লক্ষ্য করে এ বোমা কার্যকরভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ হাতিয়ার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করতে খুব ভালো কাজ করছে। আপাতত এটুকুই আমি বলতে পারি।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রীষ্মেই পাল্টা আক্রমণের সময় যুদ্ধ করার মতো উপকরণ শেষ হয়ে আসছে বলে ইউক্রেন সতর্ক করার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের এ ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সিদ্ধান্তকে কঠিন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ তার যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও স্পেনের বিরোধিতা করছিল।
তবে ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন তার দেশেরও এ অস্ত্র আছে এবং ‘আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে আমরাও সেগুলো ব্যবহার করব’। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইউক্রেনের জেনারেল ওলেকসান্দ্রার সিয়ারস্কি গত সপ্তাহে বিবিসিকে বলেছেন যে ‘শত্রুর পদাতিক বাহিনীর সর্বোচ্চ মাত্রার ক্ষতি করার মতো’ অস্ত্র তার দরকার।
কী এই ক্লাস্টার বোমা? কেনই বা তা এত ভয়ংকর? ক্লাস্টার বোমা বলতে সাধারণত অনেকগুলো ছোট ছোট বোমাকে বোঝায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে একসঙ্গে নিক্ষেপ করা হয়। বেসামরিক মানুষের বেশি হতাহতের ঝুঁকি থাকায় বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ করেছে। মূলত ক্লাস্টার বোমা ফেটে গিয়ে আরও অনেক ছোট ছোট বোমা বেরিয়ে বিরাট এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটায়। বুমারু বিমান বা জমি থেকেও এ বোমা ছোড়া যায়। এ ধরনের বিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক অনেক আগে থেকে। কারণ কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয়, বড় অঞ্চল নিশানায় থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা খুব বেশি। তাই এ বোমার ব্যবহার এক রকম নিষিদ্ধও। ক্লাস্টার বোমার অবিস্ফোরিত বোমাগুলো বছরের পর বছর মাটিতে পড়ে থাকতে পারে এবং যখন তখন তার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।