৭ অক্টোবর হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৯ হাজার ২৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯০ হাজার ৫৮৯ জন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দেইর আল বালাহ শহরের একটি স্কুলে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলায় কমপক্ষে ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়েছে।
দেইর আল বালাহর স্কুলে হামলার ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারি মিডিয়া অফিস। ওই এলাকায় বহু বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। হামলায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, খাদিজা স্কুল কমাউন্ডের ভিতরে হামাসের একটি কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা চালানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই স্কুলটি ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনারা সেখানে হামলা চালানোর আগে বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করেছে বলেও দাবি করা হয়। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময় ১ হাজার ১৩৯ জনকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। প্রায় নয় মাস ধরে গাজায় তান্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৯ হাজার ২৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯০ হাজার ৫৮৯ জন। এদিকে গাজায় শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ৪৫ জন মার্কিন চিকিৎসক এবং নার্সদের একটি গ্রুপ। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে এ বিষয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এ চিঠি প্রকাশ করা হয়। চিকিৎসাকর্মীদের ওই চিঠিতে অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন মুহূর্তেই মার্কিন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছে এ ধরনের চিঠি এলো। ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, সম্ভবত এ সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৯২ হাজারের বেশি হয়েছে। এ সংখ্যা হতবাক করার মতোই কারণ এটা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিনের যেসব শিশুর চিকিৎসা দিয়েছেন তাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা লিখেছেন, আমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন এমন সব শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি যাদের মাথা এবং বুকে গুলি করা হয়েছে। অল্পসংখ্যক মানুষ বাদে গাজার প্রায় প্রত্যেকেই অসুস্থ, আহত বা দুই ধরনের সমস্যার সঙ্গেই লড়াই করে যাচ্ছে। গতকাল সকালের দিকে ফিলিস্তিনি সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের কাছে সকালের দিক থেকে হামলায় কমপক্ষে ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের লাশ নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের সাময়িকভাবে সরে আল মাওয়াসি মানবিক এলাকায় যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গতকাল এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা সরে গেলে সেখানে ‘জোরালো অভিযান’ চালাতে পারবে তারা। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর গাজা ভূখন্ডে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তার পর থেকে নয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর বড় একটি অংশ নারী ও শিশু। রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে অবিরাম হামলা চালিয়ে গেলেও তা যে সহজ হচ্ছে না তা বিভিন্ন লক্ষণে স্পষ্ট হচ্ছে। হামাসের যোদ্ধারা অব্যাহতভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যোদ্ধাদের ছোট ছোট ইউনিটগুলো অনবরত মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আঘাত হানছে। শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এসব ইউনিটকে দমন করতে তাদের সেনারা খান ইউনিসে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং টানেল ও অন্য অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধের শুরুতে হামাস ও তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদের ২৫ হাজারের বেশি যোদ্ধা ছিল, এদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ইতোমধ্যে নিহত অথবা বন্দি হিসেবে আটক হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী গতকাল জানায়, বেসামরিক নাগরিকদের বিপদ কমাতে তাদের খান ইউনিসের কিছু নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সরে যেতে বলেছে তারা আর এ নির্দেশ বিভিন্ন মাধ্যমে ওই এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।-এএফপি ও আল জাজিরা