আস্তে আস্তে উপমহাদেশের প্রায় সব দেশের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক চলছে কয়েক বছর ধরে। পাকিস্তানের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি নেই প্রায় এক দশক। এবার সে দূরত্বে যুক্ত হলো নেপালও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি প্রথম বিদেশ সফরে প্রথা ভেঙে শত বছরের মিত্র ভারতের বদলে চীনকে বেছে নিয়েছেন। শর্মা ওলি গত জুলাইয়ে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো নেপালের ক্ষমতায় বসেন। সোমবার প্রথম বিদেশে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন ওলি। অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, নেপালের কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান তাঁদের প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই গেছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আমলে এ ইতিহাস পাল্টে গেল। প্রথা ভেঙে শত বছরের মিত্র ভারতের বদলে চীনকে বেছে নিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে সখ্যের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে বেইজিংয়ের অবকাঠামো প্রকল্প (বেল্ট অ্যান্ড রোড) শুরুর চেষ্টা এ সপ্তাহে নিয়েছেন ওলি। এ প্রকল্পে নতুন গতি চায় নেপাল।
গতকাল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির বৈঠকে স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ড লকড্) দেশ নেপালকে ‘স্থল-সংযোগপূর্ণ’ (ল্যান্ড লিঙ্কড্) দেশে রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন শি। চীনের রাস্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাসম্ভব সমর্থন-সহায়তাও অব্যাহত রাখা হবে বলে শি জানিয়েছেন ওলিকে।
মঙ্গলবার নেপাল ও চীনের মধ্যে নয়টি চুক্তি সই হয়েছে। তবে এর কোনোটিই নতুন নয়। সবই আগে করা। ওলির সফরে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে নতুন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। ঐতিহ্যগতভাবে নেপাল দক্ষিণের প্রতিবেশী ভারতের ওপর অধিক নির্ভরশীল। অলি এ প্রথা ভেঙে উত্তরের প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁর দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান। ২০১৭ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো প্রকল্প সই করে কাঠমান্ডু। তবে প্রকল্প কাঠামো দাঁড় করানো হলেও এখনো কিছু বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে নেপাল। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তরের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণের ভারতনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন ওলি। কারণ নেপালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের চেয়ে ভারতের প্রভাবই বেশি। কাঠমান্ডুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের অবদান প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। সেখানে চীনের মাত্র ১৪ শতাংশ।