আরবি ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও কোরআন অনুধাবনে সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ প্রচেষ্টা দেখা যায়। সাহাবায়ে কেরাম শুধু তেলাওয়াত নয়, কোরআন বোঝার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ছিলেন। নিম্নে কয়েকজন সাহাবির কোরআন অনুধাবন বিষয়ে আলোচনা করা হলো—
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি ১০টি আয়াত পাঠ করার পর আর আগে বাড়তেন না। যতক্ষণ না তার মর্ম অনুধাবন করতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন। (মুকাদ্দামা ইবনু কাসির; তাফসির তাবারি : ৮১)
আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন, পিতা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ১২ বছরে সুরা বাকারাহ শেষ করেন। অতঃপর যেদিন শেষ হয়, সেদিন তিনি কয়েকটি উট নহর করে সবাইকে খাওয়ান। (মুকাদ্দামা তাফসির কুরতুবি; জাহাবি, তারিখুল ইসলাম ৩/২৬৭)
ওমর (রা.)-এর মতো একজন মহান ব্যক্তির এই দীর্ঘ সময় লাগার অর্থ কোরআনের এই দীর্ঘতম সুরাটির গভীর তাৎপর্য অনুধাবনসহ পাঠ করা।
আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন, সাহাবিদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি, যাঁরা এই উম্মতের শীর্ষে অবস্থান করেন, তাঁরা কোরআন হেফজ করতেন না; একটি সুরা বা অনুরূপ কিছু অংশ ছাড়া তাঁরা কোরআনের ওপর আমল করার রিজিক লাভ করেছিলেন।
কিন্তু এই উম্মতের শেষ দিকের লোকেরা কোরআন তেলাওয়াত করবে। তাদের মধ্যে শিশু, অন্ধ সবাই থাকবে। কিন্তু তারা আমল করার রিজিক পাবে না। (মুকাদ্দামা তাফসির কুরতুবি ৭৫-৭৬)
একই মর্মে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, আমাদের জন্য কোরআনের শব্দাবলী মুখস্থ করা খুবই কঠিন।
কিন্তু এর ওপর আমল করা সহজ। আর আমাদের পরের লোকদের অবস্থা হবে এই—তাদের জন্য কোরআন হেফজ করা সহজ হবে। কিন্তু তার ওপর আমল করা কঠিন হবে। (মুকাদ্দামা তাফসির কুরতুবি : ৭৫ পৃ.)
খায়বার যুদ্ধের পর সপ্তম হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে জাতুর রেকা বা ছেঁড়া পট্টির যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বন্দিনী এক মুশরিক মহিলার স্বামী বদলা হিসেবে মুসলিম বাহিনীর রাতের বেলায় বিশ্রামের সুযোগে পাহারায় নিযুক্ত সাহাবি আব্বাদ বিন বিশরের ওপর সালাতরত অবস্থায় পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে তাঁকে মারাত্মক আহত করা সত্ত্বেও তিনি সালাত ছেড়ে দেননি। পরে অন্য পাহারা আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) যখন বলেন, আমাকে কেন জাগাননি? তখন তিনি বলেন, আমি এমন একটি সুরা পাঠে মগ্ন ছিলাম, যা থেকে বিরত হওয়াটা আমি অপছন্দ করেছিলাম।
(ইবনু হিশাম ২/২০৮-০৯; জাদুল মাআদ ৩/২২৭-২৮; আর-রাহীকু ৩৮১-৮২; আবু দাউদ, হাদিস : ১৯৮)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন