১৮ আগস্ট, ২০১৯ ২০:৪৮

কলকাতায় দুই বাংলাদেশির মৃত্যু: ১২ দিনের রিমান্ডে সেই গাড়ি চালক

দীপক দেবনাথ, কলকাতা


কলকাতায় দুই বাংলাদেশির মৃত্যু: ১২ দিনের রিমান্ডে সেই গাড়ি চালক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত জাগুয়ার গাড়ির চালক আরসালান পারভেজ(২২)-কে ১২ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত। রবিবার পারভেজকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজকে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন। 

যদিও এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা পারভেজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পূর্ণ সময়ের জন্য অর্থাৎ ১৪ দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডের আর্জি জানায় আদালতের কাছে। কিন্তু আদালত সবপক্ষের শুনানি শেষে ১২ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন। 

প্রথমে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো), ৪২৭ (অন্যের সম্পত্তি নষ্ট), ৩০৪ (২) (অনিচ্ছাকৃত খুন) ধারায় মামলা রুজু করা হলেও রবিবার এর সাথে দুইটি জামিন অযোগ্য ধারা যুক্ত করা হয়-তাহলো ৩০৮ (অনিচ্ছকৃত খুন) এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য ‘প্রিভেনশন অফ ডেমেজ টু পাবলিক প্রপার্টি’ (পিডিপিপি) আইনের ৩ নম্বর ধারা। মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করেই এই দুইটি নতুন ধারা যুক্ত করার জন্য বিচারকের কাছে এদিন আর্জি জানান রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী। আদালত তাতে সম্মতিও জানায়। 

এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, দুই বাংলাদেশিকে পিষে দেওয়ার আগে স্টিয়ারিং-এ ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব ছিল ঘাতক গাড়িটির চালকের। প্রাথমিকভাবে ওইসব এলাকার রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে শুক্রবার দিবাগত রাত ১.৫০ মিনিট নাগাদ কলকাতার শেক্সপিয়র সরণী ও লাউডন স্ট্রীটের সংযোগস্থলে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু দুই বাংলাদেশিকে পিষে দেওয়ার আগে দুইবার তার গাড়িটি ট্রাফিক সিগনাল লঙ্ঘন করে। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ বেকবাগানের বাড়ি থেকে বের হন আরসালান পারভেজ। এরপর রাসেল স্ট্রীট-মিডলটন স্ট্রীট-এলিয়ট পার্ক হয়ে যাওয়ার সময় মিডলটন স্ট্রীট ও জওহরলাল নেহেরু স্ট্রীটের সংযোগস্থলে প্রথমবার সিগনাল ভাঙেন। এরপর বিড়লা তারামন্ডল হয়ে থিয়েটার রোড হয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে বেপরোয়া জাগুয়ারটি। স্পিডোমিটার অনুযায়ী, সেময় গাড়িটির গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার। রাত ১.৫০ মিনিট নাগাদ মার্সিজিড বেঞ্চ গাড়িটির পেটে ধাক্কা মারার আগে দ্বিতীয়বারের জন্য থিয়েটার ও লাউডন স্ট্রীটের সংযোগস্থলে সিগনাল ভাঙেন পারভেজ। মার্সিডিজকে ধাক্কা মারার পরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাগুয়ারটি সজোরে ধাক্কা মারে একটি পুলিশ কিয়স্কে। জাগুয়ারের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই কিয়স্কটি। সেসময় বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে ওই পুলিশ বক্সের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিন বাংলাদেশি নাগরিক চাপা পড়েন জাগুয়ারের নীচে। শেক্সপিয়র সরণী থানার পুলিশের সহায়তায় আহতদের শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল (এসএসকেএম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় বাংলাদেশের ঝিনাইদহের বাসিন্দা কাজী মোহম্মদ মইনুল আলম (৩৬), কুষ্ঠিয়ার বাসিন্দা ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। আহত তৃতীয় ব্যক্তি সফি রহমতুল্লাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মার্সিডিজের চালক ও আরোহী কলকাতার আমরি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনার পর ঘাতক জাগুয়ারের চালক পারভেজ গা ঢাকা দিলেও জাগুয়ারের নম্বর প্লেট থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ে দেখে শনিবার দুপুরে কলকাতার বিখ্যাত রেস্তোরাঁ (আরসালান বিরিয়ানি) মালিকের ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এদিকে দুর্ঘটনার সময় পারভেজ নেশাগ্রস্ত ছিলেন কি না তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। যেহেতু দুর্ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেফতার করা হয়, সেক্ষেত্রে তার রক্ত পরীক্ষা করেই এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হতে চাইছে তদন্তকারী কমকর্তারা। 

শনিবার বিকালেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি দুইটি ও তার যন্ত্রাংশ গুলিকে পরীক্ষা করে দেখেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। গাড়ি দুইটির মধ্যে থাকা ইভেন ডেটা রেকর্ডার থেকে গাড়ির গতিবেগ, সংঘর্ষের মুহূর্তের তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। 

অন্যদিকে, রবিবার সকালেই নিহত কাজী মহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) এবং ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)-এর লাশ দুইটি ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছয়। সকাল ৯টার দিকে লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সীমান্ত পার করে বাংলাদেশ প্রবেশ করে। 

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর