জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) নিয়ে ফের একবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় কোনভাবেই এনআরসি মানা হবে না।’
সোমবার রাজ্যটির শিলিগুড়ির পুলিশ লাইন প্রাঙ্গণে বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠান থেকে মমতা এ কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘এ রাজ্যে কোন এনআরসি হবে না। একটা জিনিস মনে রাখবেন কোন ভাগাভাগি হবে না। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এর নামে ৬ বছর বিদেশি করে দেয়া হবে। এতে কত লোক মারা যাবে। ছ'বছর পর কি হবে কে জানে। এটা মাথায় রাখবেন যে আমরা সকলেই নাগরিক। আমরা বাংলার মাটিতে বাস করি-আমরা সবাই বাংলার নাগরিক তথা ভারতের নাগরিক। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামই আমাদের এই অধিকার দিয়েছে। এই অধিকার দিয়েছেন দেশের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাবা সাহেব আম্বেদকর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের মতো মনীষীরা। এই অধিকার এমনিতে আসেনি।
তিনি বলেন, 'আমরা সবাই ভোট দিই। ভোটের অধিকার হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। এই অধিকার থাকা মানেই আমরা সকলেই নাগরিক। আমরা এনআরসি এখানে করতে দেব না-এটা আপনাদের নিশ্চিন্ত করে দিয়ে গেলাম।'
মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ‘বাংলা শান্তির বাংলা। আমরা বাংলায় শান্তি চাই। এ বাংলায় আমরা ওসবকিছু করতে দেবো না। কোন প্রশ্নই আসে না। এখানে সব মানুষের থাকার অধিকার আছে। একটি মানুষও বাংলা থেকে কোথাও যাবেনা, এব্যাপারে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরাই আপনাদের পাহারাদার। এটা মাথায় রাখবেন। আমাদের সরকার ছিল, আছে, থাকবে এবং মানুষের সাথে থাকবে।’
বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে মমতার অভিযোগ, ‘মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দুদের ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে, কখনো মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দি ভাষীদের, কখনো হিন্দি ভাষীদের সঙ্গে উর্দু ভাষীদের আবার কখনও ব্রাহ্মণদের সাথে ক্ষত্রিয়দের ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ। আমাদের সকলেরই অধিকার আছে। কিন্তু আমি যদি মনে করি যে আমি মমতা ব্যানার্জি, বাংলায় শুধু ব্যানার্জি থাকবে আর কেউ থাকবে না-এটা আমি ভাবতে পারি না। দরকার হলে আমার ব্যানার্জি থাকবে না কিন্তু মানুষ থাকবে।’
লোকসভা ভোটের পর এই প্রথম উত্তরবঙ্গে আসলেন মমতা ব্যনার্জি। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব, মলয় ঘটক, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।
উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘আগে শিলিগুড়িতে খুব যানজট ছিল, সেরকম রাস্তা ছিল না। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। তার কারণ এখানে বড় চওড়া রাস্তা হয়েছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের রাস্তার সাথে আজ নেপাল-বাংলাদেশ-ভুটানের সাথে সরাসরি সংযোগ হয়েছে। এখন গাড়িতে করেই সড়ক পথে যাওয়া যাবে। এত বড় সুযোগ আগে কখনও ছিল না।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগষ্ট আসামে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়ে ১৯ লাখের বেশি নাম। ওই ঘটনার পরই বিতর্কের শুরু। যদিও আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি চালুর দাবি জানিয়ে আসছে বিজেপি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল