না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিশিষ্ট বাঙালি কবি-সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটের দিকে ভারতের দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কে নিজ বাসভবন ‘মা’র ভালবাসা’য় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
দীর্ঘদিন ক্যনসারে ভুগছিলেন নবনীতা দেবসেন, সাথে ছিল বার্ধক্যজনিত রোগও। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি বাইরেও খুব একটা বেরোচ্ছিলেন না। বাড়িতেই চলছিল তার চিকিৎসা।
তার মৃত্যুর খবর শুনেই দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কের বাসভবনে ভিড় জমান ভক্ত, অনুরাগী ও যাদবপুরের শিক্ষার্থীরা। তার বাড়ির সামনে উপস্থিত হন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়, তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব। যদিও প্রয়াত নবনীতা দেবসেনের বাড়ির কারও সাথেই কথা বলতে পারেননি তারা।তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার তার মরদেহ বাড়িতেই শায়িত রাখা হবে। শেষকৃত্যের ব্যাপারে শুক্রবারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নবনীতা দেবসেনের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। টুইট করে তিনি লেখেন- ‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ নবনীতা দেবসেনের প্রয়াণে আমি খুবই মর্মাহত। একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লেখিকার অনুপস্থিতি তার গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্খীরা অনুভব করবেন। তার পরিবার ও গুণমুগ্ধদের প্রতি আমার সমবেদনা।’
শোক প্রকাশ করে বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানান- নবনীতা দেবসেনের চলে যাওয়াটা আমার ব্যক্তিগত ও বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তিনি এত প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ ছিলেন বা এত সুন্দর লেখক ছিলেন তা আর পাওয়া যাবে না। ও যাতে হাত দিয়েছেন তাতেই সোনা ফলেছে। আমি তার লেখার খুব ভক্ত ছিলাম। তার মতো রসবোধ সম্পন্ন লেখক খুব কম আছে।’
গত মাসের শেষ দিকে নবনীতা দেবসেনের বাড়িতে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি।
১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নবনীতা। তার পিতার নাম নরেন্দ্র দেব, মাতা রাধারানী দেবী। তারাও উভয়েই ছিলেন কবি। স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ও যাদবপুর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মাস্টার্স করেন তিনি। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করেন। পড়াশোনা করেছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও। ১৯৭৫-২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা ও বেশ কিছুকাল বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
১৯৫৯ সালে প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় নবনীতা দেবসেনের। তার প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম প্রত্যয়’। ১৯৭৬ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘আমি অনুপম’। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮টি।
আত্মজীবনীমূলক রম্যরচনা ‘নটী নবনীতা’ গ্রন্থের জন্য ১৯৯৯ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন নবনীতা দেবসেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের স্ত্রী ছিলেন নবনীতা। ১৯৫৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দুই কন্যা অন্তরা দেব সেন ও নন্দনা সেন। বড় মেয়ে অন্তরা সাংবাদিক ও সম্পাদক, অন্যদিকে ছোট কন্যা নন্দনা অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী। যদিও ১৯৭৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিদেশ থেকে অমর্ত্য সেন ফোনে কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ‘তার সাথে দেখা করতে পারলে ভাল হতো। তার অভাব অনুভব করবো। মানুষ তার অভাব বহুদিন মনে রাখবেন।’
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম