২ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:২৮
কলকাতায় ‌'বাংলাদেশ বইমেলা-২০২২'

বইয়ের থেকে ভালো সঙ্গী আর বোধ হয় কিছু না: শিক্ষামন্ত্রী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বইয়ের থেকে ভালো সঙ্গী আর বোধ হয় কিছু না: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, যেকোন মেলাই আনন্দের, বিশেষ করে বই মেলা।  বইয়ের থেকে ভালো সঙ্গী আর বোধ হয় কিছু হয় না। 

শুক্রবার কলকাতার কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া 'বাংলাদেশ বইমেলা-২০২২' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন দীপু মনি। বইমেলার পরিবেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, কলেজ স্ট্রিট হল কলকাতার বই পাড়া, চারিদিকে এত নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমন একটি জায়গায় এই বইমেলা সত্যিই খুব আনন্দের। কলেজ স্কোয়ার হচ্ছে বই মেলার জন্য খুব ভালো জায়গা। 
 
তিনি বলেন, কলকাতা কখনই আমাদের কাছে বিদেশ বলে মনে হয় না। ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমরা হয়তো দুই দেশের বাসিন্দা কিন্তু ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি সব দিক থেকেই আমাদের বন্ধন এত জোরালো যে, এখানে আসতে পারলে ভালো লাগে। 

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার যে প্রচার ও প্রসার তাতে বাংলাদেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন। এরপর ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে এই ভাষাকে আরো উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি যখন বাংলায় জাতিসংঘে ভাষণ দিলেন তারপর এই ভাষা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা রাখেন। 

তার অভিমত, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে বাঙালিদের উদ্যোগী হতে হবে এবং এই ধরনের বইমেলা আরো বেশি করে অর্থবহ করে তুলতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ভাতৃত্ব ও সৌহাদ্যের বন্ধন, তা আরো গভীর হবে। আমাদের এই বন্ধুত্বের বন্ধন জোড়ালো হয়েছিল ১৯৭১ সালে। আর আজ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। আমি আশা করব এই প্রচেষ্টা আরো ভালো জায়গায় নিয়ে যাবে। 

মমতা ব্যানার্জি এবং শেখ হাসিনার মধ্যেকার  সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্নেহভাজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের বই নিয়ে যাতে ওপার বাংলাতেও বইমেলা করা যায়, সে ব্যাপারে আশ্বাস দেন দীপু মনি। 

দীপু মনি ছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, তৃণমুল কংগ্রেস বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, উপ হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রকাশক ও কবি সুধাংশু শেখর দে, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, কলকাতা পৌরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুপর্ণা দত্ত প্রমুখ। 

করানোর কারণে গত দু'বছর পর এবার ফের বই মেলা শুরু হল। স্বভাবতই প্রকাশক, ক্রেতা, বিক্রেতা সকলের মনেই নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। 

অন্যদিকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, এই মেলা দুই বাংলার মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। কাঁটা তার, ভিসা, পাসপোর্ট এই সব শব্দপুঞ্জকে একটা জিনিসই অতিক্রম করতে পারে- সেটি হল বই। বইই আমাদেরকে জুড়তে পারে।
 
একসময় পাশে থাকা শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মজা করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের আপা দীপু মনি আজ এখানে উপস্থিত আছেন। আমি জানি বক্তব্য দীর্ঘায়িত করলে তার প্লেন মিস হতে পরে। কিন্তু আমরা তো চাই অতিথিরা এখানে বেশি বেশি করে আসুক।

যারা বইয়ের খোঁজে এসেছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ড. সৈয়দ মনজুরুল বলেন, কলেজ স্ট্রিট হলো বইয়ের আঁতুড়ঘর। আমি এখান থেকে বহুবার বই কিনেছি। এটি কলকাতার বই পাড়া। ফলে এখানে বইমেলা হওয়াটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। 

মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু বইমেলা, কেনা বেচার মেলা নয়, দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরির মেলা এবং আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। 

তিনি আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গের লেখক কিংবা বইয়ের যে পরিচিতি বাংলাদেশে আছে, বাংলাদেশের বইয়ের সেই অর্থে পশ্চিমবঙ্গে আসে না। ফলে এখানকার পাঠকদের একটা চাহিদা ছিল। এই মেলার ফলে সেই চাহিদা কিছুটা পূরণ হচ্ছে। 

সুধাংশু শেখর বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা চলছে। মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই মেলা আরও প্রসারিত হয়েছে। এখন বই এর সংখ্যা বেড়েছে, পাঠকও বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের বিক্রি বাংলাদেশেও বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বই এর সম্ভার নিয়ে ওপার বাংলায় বইমেলা করার আবেদন জানিয়ে সে দেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুধাংশু দে। 

তৃণমূল বিধায়ক দেবাশীষ কুমার বলেন, এবছর মোহরকুঞ্জে বই মেলা না হওয়ায় কারণে মিশনের বিকল্প জায়গার সন্ধান করা হয়। তারপরই কলেজ স্কোয়ারে এই মেলার প্রস্তাব দিই, তারাও সম্মতি জানায়। তার অভিমত, অবিভক্ত বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বইয়ের আতুর ঘর হচ্ছে এই কলেজ স্ট্রিট। এবার সেখানে বই মেলা হচ্ছে। মেলার অর্থ মানুষের মিলনস্থল তাই এই মেলা থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধন যেন আরো সুদৃঢ় হয় সেই আশা রাখি। 

এবারের বাংলাদেশ বইমেলা উৎসর্গ করা হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আর প্রথমবারের মতো এবারই মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু কর্নার'। এদিন এই বঙ্গবন্ধু কর্নারটি ঘুরে দেখেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

উল্লেখ্য, এবারের বইমেলা ১০ তম বর্ষে পড়ল। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, ঢাকার উদ্যোগে এই বই মেলা চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

এদিন বিকালে ফিতে কাটার মধ্যে দিয়ে বই মেলার উদ্বোধন হয়। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন। দশ দিনব্যাপী এই বইমেলায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকছে। উজান, মনভাষা, সহজ মানুষ এর মতো বাংলা ব্যান্ডও এই বই মেলায় অংশগ্রহণ করবে। 

প্রতিদিন দুপুর ১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে। অন্বেষা প্রকাশন, আহমেদ পাবলিশিং হাউস, মাওলা ব্রাদার্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সাহিত্য প্রকাশ, অবসর প্রকাশনা সংস্থা, সৃজনী, আগামী প্রকাশনী, সময় প্রকাশনসহ বাংলাদেশের ৬৮ টি শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করছে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর