৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ ২৩:০৬

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা

সংগৃহীত ছবি

অবশেষে ফারাক্কায় আদানি পাওয়ারের কাজ বন্ধের দাবি ও অন্যান্য দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। বাংলাদেশকে আদানি গোষ্ঠির বিদ্যুৎ রপ্তানি প্রকল্পের বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেসন বা পিল) দায়ের করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ৩০ জন ফল বাগানের চাষি ও অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর) নামে একটি সংস্থা। 

মঙ্গলবার এই মামলাটি গ্রহণ করেন কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলার কেস টাইপ ডব্লিউপিএ(পি), ফাইলিং নম্বর ৩৯/২০২৩ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৮/২০২৩। আর এতেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি গোষ্ঠীর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার উপর দিয়ে খুঁটি দিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের তার (হাইটেনশন) যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু জেলার যে অংশের উপর দিয়ে আদানির এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে, সেই ফারাক্কা নামক জায়গায় প্রচুর পরিমাণ আম ও লিচুর বাগান থাকায় তাতে প্রবল আপত্তি জানায় সেখানকার ফল বাগানের চাষিরা। গত বছরের জুলাই মাসে এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জড়িয়ে পরে গ্রামবাসী। আহত হয় একাধিক গ্রামবাসী ও পুলিশ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক আম-লিচু বাগানের উপর গিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছে আদানি। 

গ্রামবাসীর দাবি এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণ আম গাছ, লিচু গাছ রয়েছে। ওই আম-লিচুর ফলনের উপরই তারা নির্ভরশীল। তা থেকেই জীবন অতিবাহিত হয় তাদের। কিন্তু ওই ফসলী জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে ফলনের উপর প্রভাব পড়বে।

এমন অবস্থায় গত জুলাই মাসেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় লুৎফর রহমান নামে এক ফল চাষী।  সেই সময় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যর বেঞ্চ গোটা মামলা শোনার পর আদানি গোষ্ঠীর জমি কেনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আদানি গোষ্ঠী যেহেতু বিদ্যুতের খুঁটি গাড়ছে, তাই তাদের আদানির প্রকল্পের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।

একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসককে ফারাক্কা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেও নির্দেশ দেন বিচারপতি। আদালতের নির্দেশ, কৃষকদের জমির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনিই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এদিকে দীর্ঘ ৬ মাসে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তায় আদনির সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি চাষীদের। চাষবাস হারিয়ে কার্যত বিপাকে পড়েছে তারা। এমন অবস্থায় ফের আদানি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ফারাক্কার ক্ষতিগ্রস্থ ৩০ ফল বাগানের চাষী ও এপিডিআর। যদিও জমি জটের অভিযোগ তুলে এর আগেও সরব হয়েছিল এপিডিআর। 

তাদের হয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সিনিয়র আইনজীবী ঝুমা সেন। আদালত এদিন এই মামলাটি গ্রহণও করে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে। 

এতে স্বাভাবিক ভাবেই আদানি গোষ্ঠীর ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর