বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ফতোয়ার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় ৪০ মাস

ফতোয়াকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশের পর প্রায় ৪০ মাস হতে চলল কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি আজও। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রায়টি লেখা ও রিভিশনের কাজ চলছে এখন। আইনজীবী ও আলেম সমাজের আশা, ফতোয়া প্রদান ও এর অপব্যবহার রোধের বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেবেন সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের একটি বেঞ্চ ফতোয়াকে বৈধ বলে ঘোষণা করেন ২০১১ সালের ১২ মে। হাইকোর্টের রায় আংশিক বাতিল করা হয় ওই আদেশে। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ বলা হয়, ধর্মীয় বিষয় হিসেবে ফতোয়া দিতে পারবেন কেবল শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য আলেমরাই। এটি মানা না মানা ঐচ্ছিক। এর নামে কাউকে কোনোরূপ শাস্তি দেওয়া যাবে না। কারও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এমন ফতোয়াও দেওয়া যাবে না।
ফতোয়া নিয়ে আপিল আবেদনকারী মুফতি মো. তৈয়বের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোয়া তিন বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও ফতোয়ার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি এখনো। কোনো সময়সীমা না থাকলেও একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রায় প্রকাশিত হওয়া উচিত।
পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০০০ সালে রাগের মাথায় নওগাঁর শাহিদাকে তালাক দেন স্বামী। পরে ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রীকে আবার গ্রহণ করতে চান তিনি। কিন্তু আজিজুল হক নামে স্থানীয় এক মাওলানা ফতোয়া দেন, তালাকের পর ‘হিল্লাবিয়ে’ ছাড়া পূর্বের স্ত্রীকে গ্রহণের সুযোগ ইসলামী আইনে নেই। তিন তালাকের পর তালাকদাতার আবার গ্রহণের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে অন্যত্র স্বাভাবিক বিয়ে দেওয়ার (হিল্লাবিয়ে) ব্যাপারে মাওলানার এই মতামতকে আদালতের নজরে আনে সংবাদপত্র। এরপর সুয়োমটো রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ফতোয়াকে অবৈধ ও আইনবহির্ভূত বলে ঘোষণা করেন ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি। বিচারপতি গোলাম রাব্বানী এবং বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। ফতোয়াবিষয়ক আপিলের শুনানি শুরু হয় ২০১১ সালের ১ মার্চ। শেষ হয় ওই বছরের ৪ মে। শুনানিতে ছয় সদস্যের একটি বেঞ্চের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। হাইকোর্টের শুনানিতে অংশ নেওয়ায় বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অনুপস্থিত ছিলেন এ মামলার আপিল শুনানিতে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আপিল আবেদনকারী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ মামলার শুনানিতে আইনজীবী টি এইচ খান, এম আমীর-উল ইসলাম, রফিক-উল হক, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল ইসলাম, এম জহির, এ বি এম নূরুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ এবং এম আই ফারুকীর বক্তব্য গ্রহণ করেন আদালত। ফতোয়ার পক্ষে মত দেন অ্যামিকাস কিউরিদের অধিকাংশই। পক্ষে ছিল রাষ্ট্রপক্ষও। এ ছাড়া আদালতে মতামত দেন দেশের পাঁচ বিশিষ্ট আলেমও। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতি মোহাম্মদ কেফায়াত উল্লাহ, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি রুহুল আমিন, ঢাকার গেণ্ডারিয়ার নেসারিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি কফিল উদ্দিন সরকার, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষা সচিব মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের উপপরিচালক মুফতি আবদুল্লাহ আল মারুফ ফতোয়াকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করেন। মুফতি আবদুল্লাহ আল মারুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুগান্তকারী রায়ে ফতোয়াকে বৈধতা দিয়েছেন আদালত। কিন্তু এত দিনেও একটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত না হওয়া অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, বৈধতা দিয়ে আদালত ফতোয়ার অপব্যবহারের যে পথ রুদ্ধ করেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিলম্বে ব্যাহত হবে তার সুফল। আশা করি, ফতোয়ার অপব্যবহার রোধে একটি গাইডলাইন থাকবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর