শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

চবি দখলে মরিয়া শিবির

চবি দখলে মরিয়া শিবির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) হল কেন্দ্রিক ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে ছাত্রশিবির। কিন্তু সংঘর্ষ, হামলা ও আহত-নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হল বন্ধ হওয়ায় ক্রমশ খর্ব হতে থাকে শিবিরের আধিপত্য। ফলে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ, খর্ব হতে যাওয়া আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হল নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা জিইয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাদের এ তৎপরতা ক্যাম্পাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে নগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
চবি সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে শিবিরের মূল শক্তি হচ্ছে হলগুলো। চবির ১০টি হলের মধ্যে ছাত্র হল সাতটি ও ছাত্রী হল তিনটি। ছাত্রদের সাতটির মধ্যে শাহজালাল হল ও সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের দখলে থাকলেও বাকি শাহ আমানত, সোহরাওয়ার্দী, আবদুর রব, আলাওল ও এ এফ রহমান হল ছাত্রশিবিরের দখলে ছিল।   
জানা যায়, ১৯৯০ সালে ভেঙে দেওয়া হয় চাকসু। এরপর থেকে চবিতে একক আধিপত্য বিস্তার করছে শিবির। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শাহজালাল, শাহ আমানত ও আবদুর রব হল দখলে নেয় ছাত্রলীগ। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর ফের সেগুলো দখল করে শিবির। পরে ২০১২ সালে ‘শাহজালাল হল’ দখলে নেয় ছাত্রলীগ। গত ১২ জানুয়ারি শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বন্ধ করে দেওয়া হয় শিবিরের দখলে থাকা ‘শাহ আমানত হল’। গত ২৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে গুলিবিনিময়ের পর ‘সোহরাওয়ার্দী হলে’ অভিযান চালিয়ে পুলিশ পেট্রোল বোমা ও পাথর উদ্ধার করে। এর পরই শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ হলটিও বন্ধ করে দেয়। পর পর তিনটি হল থেকে বের হয়ে আসার পর শিবিরের ক্ষমতা অনেকটা খর্ব হয়। বিপাকে পড়ে সংগঠনটি। কিন্তু গত ৩১ আগস্ট থেকে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ‘হলের আবাসিক শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে মূলত শিবিরকর্মীরাই ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়ে শিক্ষক বাসে হামলা, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ এবং শাটল ট্রেনে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবারও চবি বাসে শিবিরের হামলায় শিক্ষকসহ ১৪ জন মারাত্মক আহত হন। এ ছাড়া ধর্মঘটের প্রথম দিনে চৌধুরীহাট স্টেশনে শাটল ট্রেনে ককটেল ছোড়ে, দ্বিতীয় দিন একই এলাকায় শিক্ষক বাসে ভাঙচুর, ৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইস্পাহানী রেল ক্রসিং এলাকায় বাস ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। এসব ঘটনার পরই মূলত অস্থির হয়ে ওঠে চবি। ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহিংস হয়ে পড়ে শিবির। তবে অস্থির এ সময়ও শিবির কৌশলে নেপথ্যে থেকে ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হলে, সখ্য বাড়াচ্ছে বিভক্ত ছাত্রলীগের একটি অংশের সঙ্গে, সক্রিয় আছে হলে নতুন বরাদ্দ পাওয়া ছাত্র ও আসন নিয়ন্ত্রণে, পছন্দের ছাত্রকে আসন বরাদ্দ, হলগুলোতে নিজস্ব নিয়ম-প্রথা চালু, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে কঠোরতা প্রদর্শন ও নিজেদের মতো করে চলতে বাধ্য করা।  এ ব্যাপারে ছাত্রশিবির চবি শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে সভাপতি ছাড়া ক্যাম্পাসের কোনো বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না অন্য নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ, সরকারের মনোভাব, সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গত কয়েক বছর শিবির অনেকটা ‘নিয়ন্ত্রিত’ আচরণ করে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হলে সংঘর্ষের ঘটনায় শিবির ব্যাপকসংখ্যক ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। মরিয়া হয়ে ওঠে হল নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে ক্যাম্পাসে শিবির অনেকটা কোণঠাসা থাকলেও ভেতরে ভেতরে সংগঠনটি শক্তি বৃদ্ধির মিশনেও আছে বলে জানা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর