শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

মাশরুমে বেকার মুক্ত হচ্ছে বগুড়া

মাশরুমে বেকার মুক্ত হচ্ছে বগুড়া

মাশরুমের চাষ ও চাহিদা দুই-ই বাড়ছে বগুড়ায়।প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় মণ মাশরুম উৎপাদন হয় এখানে। নিয়মিত ভোক্তা রয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি। জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে সাভারের সোবহানবাগে মাশরুম সেন্টারকে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে উন্নীত করা হয়। এর আওতায় প্রথমে দেশের ছয়টি বিভাগে ছয়টি সাব সেন্টার এবং পরে ১৬টি সাব সেন্টার স্থাপন করা হয়। এ তালিকায় বগুড়ার হর্টিকালচার সেন্টার সাব সেন্টার হিসেবে গড়ে ওঠে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত মাশরুম চাষ সম্পর্কে বিনা খরচে ২১৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা ১২৪৮ ও পুরুষ ৯১২ জন। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করছেন শতাধিক চাষি। বগুড়ায় প্রতিদিন গড়ে দেড় মণ মাশরুম উৎপাদন হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে নিয়মিত ভোক্তা রয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি। মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এ জেলায় অনেক বেকার হয়েছেন স্বাবলম্বী। দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়নের ঝালঘড়িয়া গ্রামের বাবর আলীর দুই ছেলে রাজু হোসেন ও জসিম উদ্দিন প্রশিক্ষণ নেন। পরে তারা বাড়িতে মাশরুম উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে এ দুই ভাই প্রতি মাসে প্রায় ৩৫০ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন, যার বাজার মূল্য প্রায় অর্ধলাখ টাকা। রাজু জানান, বগুড়া সাব সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতেই প্রথমে অল্প কিছু স্পন প্যাকেট পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ শুরু করেন। সেখান থেকে এখন তার ৩০ ফুটের দুটি রুমে দুই হাজার স্পন প্যাকেট রয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি কাঁচা মাশরুম বগুড়া শহরে বিক্রি করেন। শুকনো মাশরুম বিক্রি হয় ঢাকায়। তারা বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য শুকনা মাশরুম সরবরাহ করেন। কাঁচা মাশরুম পাইকারিভাবে ১৬০ টাকা ও শুকনা ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়ে থাকেন। রাজুর বাবা বাবর আলী বলেন, ‘আমি দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকার সাভারে রিকশা চালাতাম। এমন সময় মাশরুম চাষের কথা জেনে ওদের বগুড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠাই। এখন মাশরুম চাষ করেই সংসারের আয় হয়।’

বগুড়ার বনানী হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানা যায়, পলিথিনের ব্যাগে ধান গাছের খড় ও মাশরুম বীজ ভরে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে ২৪ দিন ঘরে রাখতে হয়। পুরো প্যাকেট সাদা হলে প্যাকেটের গা ডি আকারে কেটে রেখে সাত দিন পানি স্প্রে করে দিতে হয়। এর পর মাশরুমের পিন জন্ম নেয়। এর ২-৩ দিন পর মাশরুম পূর্ণ হলে তা কেটে বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম খুচরা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, শুকনা ১২০০ এবং গুঁড়া ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
বগুড়া মাশরুম উপকেন্দ্রের প্রধান ও বনানী হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান জানান, ২১৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে আপাতত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেই। এখন সাব সেন্টার মাশরুম চাষিদের পরামর্শ ও বীজ সরবরাহ করে। সেই সঙ্গে বাজার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মাশরুম পল্লি সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ, বেকার সমস্যা সমাধান, আয় সৃষ্টি ও পুষ্টি নিরাপত্তা সৃষ্টি করতে কাজ করা হয়। বগুড়ায় মাশরুম বিক্রির চারটি কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো- বনানী হর্টিকালচার সেন্টার, বনানী বাজার, সাতমাথা ও কলেজ রোড ফুলবাড়ি। তিনি আরও জানান, মাশরুম শুধু খাদ্য ঘাটতি পূরণেই কাজ করে না বরং ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি সবজি। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মেদ-ভুঁড়ি, অ্যাজমাসহ অন্তত ২০ ধরনের জটিল রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে মাশরুম। এটি ভর্তা, সবজি, ভাজি, চাইনিজ স্যুপ, পোলাওয়ে ব্যবহারসহ নানাভাবে খাওয়া যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর