রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে দেশের ১৯ জেলা

প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় পাঁচ জেলায় ৩১৭ কি.মি. সড়ক বা বাঁধ রি-সেকশনিং হবে

জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে দেশের ১৯ জেলা
দেশের ১৯ উপকূলীয় জেলার ২৪৩ ইউনিয়নকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা প্রবণতা ও দারিদ্র্য বিবেচনা করেই এসব জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকার জলবায়ু পরিবর্তন ও ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। ঝুঁকির তীব্রতা বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিকভাবে পাইলেট প্রজেক্ট হিসেবে ১৯টির মধ্যে পাঁচ জেলার ১০ উপজেলায় এ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় পাঁচটি জেলায় ৩১৭ কি.মি. সড়ক বা বাঁধ রি-সেকশনিং করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেবে ডেনমার্কভিত্তিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস (ডানিডা)। আর বাকি টাকা জিওবি থেকে ব্যয় করা হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপশন প্রজেক্ট (সিসিএপি) শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন করবে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির অনুমোদনও দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির তীব্রতা, বন্যা প্রবণতা এবং দারিদ্র্য বিবেচনা করে পাঁচটি জেলাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি ও কলাপাড়া, বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ ও সদর উপজেলা, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও সুবর্ণ চর, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রকল্পের কাজ হবে। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে রয়েছে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পিরোজপুরও। তবে প্রকল্পের এলাকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার সুপারিশও রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সঙ্গে সহনশীল পরিবহন নেটওয়ার্কের উন্নতি, কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলার ২৪৩টি ইউনিয়নকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ১৯টি জেলা থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের ১০টি উপজেলাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুর্যোগ প্রবণতা ও পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রণীত দরিদ্রতার মানচিত্রকে এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় পাঁচটি জেলায় ৩১৭ কি.মি. সড়ক বা বাঁধ রি-সেকশনিং করা হবে। ২০ কি.মি. গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, ৮ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক পাকাকরণ এবং ৬ কি.মি. সিসি ব্লক রোড নির্মাণ করা হবে। ২০ কি.মি. খাল পুনঃখনন করা হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য খনন করা হবে ২০টি পুকুর। ২০টি গ্রামীণ বাজার/গ্রোথ সেন্টার এ প্রকল্পের অধীনে উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া ১০০ কিলোমিটার এলাকায় বৃক্ষরোপণ ও ১৫ হাজার দুস্থ কর্মজীবী নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানা গেছে, প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেক সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে নেওয়া হবে। বাকি ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেবে ডানিডা। এ প্রকল্পের অধীনে ডানিডা এরই মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি নিশ্চিত করেছে। ২৮ কোটি ২০ লাখ টাকার সহায়তা চুক্তি চলতি অর্থবছরের মধ্যেই হবে বলে আশ্বস্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

সর্বশেষ খবর