শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নকশিকাঁথায় রঙিন ঠাকুরগাঁও

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

নকশিকাঁথায় রঙিন ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে নকশিকাঁথা তৈরিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নারীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ কাজে। সংসারের কাজকর্মের ফাঁকে তারা বসে না থেকে এ পেশায় মেতে উঠেছেন। বাড়ির উঠানে, এমনকি আমবাগানে চার-পাঁচ জন দলবদ্ধ হয়েও নকশিকাঁথা বুনছেন।

বাহারি রঙের কাপড় ও সুতা দিয়ে তৈরি করা নকশিকাঁথার হরেক রকম  নাম দিয়েছেন নকশিশিল্পীরা। এসব নকশিকাঁথার নাম হলো সুজনী কাঁথা, কার্পেট কাঁথা, লেশকাঁথা, স্যাঁথা, বনমালী, কল্যাফুল, জমিনফুল, বকুলফুল, চেইনফোঁড়, তয়লা কাঁথা, ভরাইসোজা, বেডজমিন, দড়িজমিন, ট্যালকাঁথা, ছন্দকাঁথা, ঘাটসেলাই, ডালালিক, পানতাস ফুল, লিকলোহিরা, শিষ ফুল, জাহাজ ফুল, আয়নাকাটা, বিস্কুট ফুল, বুতাম ফুল, লিক টানা, সোজা লিক, তিন ফোঁড়, ভাঙা কাঁথা ইত্যাদি। শিল্পীদের কাছ থেকে জানা যায়, একটি নকশিকাঁথা তৈরিতে প্রকারভেদে সময় এক-দুই মাস লেগে যায়। বাহারি রঙের কাপড় ও সুতা দিয়ে তৈরি করতে বেশি সময় লাগে। তারা জানান, কাঠের তৈরি নকশা, হাতে তৈরি ফুলের ওপর সুই-সুতার ফোঁড়ের পর ফোঁড় দিয়ে তৈরি এসব নকশিকাঁথার কদর থাকলেও উপযুক্ত মজুরি পান না শিল্পীরা। বিভিন্নভাবে তারা প্রতারিতও হন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা প্রতিযোগিতা করে নকশিকাঁথা তৈরি করছেন। বামুনিয়া গ্রামের গৃহিণী সেতারা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে স্বামীর আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু এখন নকশিকাঁথা তৈরি করে প্রতি মাসে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা আয় করে সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছি। তাই স্বামীও এখন আগের চেয়ে আমাদের কাজে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’ একই গ্রামের গৃহবধূ শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমরা নিজেরা নকশিকাঁথা তৈরি করি এবং কেউ অর্ডার দিলে চুক্তি মোতাবেক সেলাই করি।’ পাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শিউলী জানান, তার বাবা গরিব মানুষ হওয়ায় তার পড়ালেখার খরচ ঠিকমতো বহন করতে পারেন না। তাই শিউলী পড়ালেখার পাশাপাশি নকশিকাঁথা তৈরি করে পড়ালেখার খরচ চালায়। গৃহবধূ শারমিন বেগম বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং স্থানীয় বাজার তৈরি হলে আমরা ন্যায্য মূল্য পাব। এতে নকশিকাঁথার কদর আরও বাড়বে। সরকারি-বেসরকারি অর্থসহায়তা পেলে ঠাকুরগাঁওয়ে নকশিকাঁথার হারানো গৌরব আবারও ফিরে আসবে।’

সর্বশেষ খবর