শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

টানাপড়েনে ক্রমেই শীতল হচ্ছে বিএনপির সম্পর্ক

মাহমুদ আজহার

টানাপড়েনে ক্রমেই শীতল হচ্ছে বিএনপির সম্পর্ক

গেল বছর পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তখন সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতার সঙ্গে বিএনপি প্রধানের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। এর আগে সৌদি যুবরাজসহ সৌদি আরবের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন বেগম জিয়া। এমনকি বিএনপি প্রধানের ওই সফরে সফরসঙ্গীকে ওমরাহ ভিসাও দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি। তার সঙ্গেও দেখা সাক্ষাৎ হয়নি বেগম জিয়ার।

সর্বশেষ ইসরায়লের লিকুদ পার্টির নেতা মান্দি এন ফারাদির সঙ্গে বিএনপির এক নেতার দেখা-সাক্ষাতের খবরে ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিন। ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। পরে অবশ্য বিএনপি নেতারা ওই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপরও টানাপড়েন সম্পর্ক কাটেনি। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতি থেকে ক্রমেই ছিটকে পড়ছে বিএনপি। দিন দিন এ সম্পর্ক আরও শীতল হচ্ছে। দলের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞ কূটনৈতিক নেতারও সংকট। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সরকারের নানামুখী তত্পরতায় পিছিয়ে পড়েছে দলটি। যদিও শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কঠোর অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্য। পবিত্র ওমরাহ ভিসা নিয়েও কড়াকড়ি আরোপ করেছে সৌদি আরব।  এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বিএনপির গভীর সম্পর্ক ছিল, আছে ও থাকবে ইনশাল্লাহ। মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা ফিলিস্তিনি নির্যাতিত জনগণের পক্ষে আছি এবং থাকব। শহীদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্ক এখনো অব্যাহত রয়েছে।’ মোসাদের সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর দেখা-সাক্ষাতের খবরে গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। দৃষ্টি এড়াইনি ফিলিস্তিনেরও। ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস রামাদান তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইসরায়েলের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রকারান্তরে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’র শামিল। বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততার খবর চাউর হতেই ফিলিস্তিনি দূতাবাসে ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে আছে। মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যে ‘আশ্বস্ত’ হওয়ার কথাও জানান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস রামাদান। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যেভাবে হামলা হচ্ছে বিএনপি তা সমর্থন করে না। বিএনপি সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে এবং থাকবে।’ তবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের এ ধরনের কঠোর মন্তব্যে বিএনপির ভেতরেও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সরকারের চাপেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত এ ধরনের মন্তব্য করেন বলেও দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দোভাষী এনামুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। আসলাম চৌধুরী ইস্যুতেও বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ রাষ্ট্র টু রাষ্ট্রের একটি সম্পর্ক আছে। এটা থাকবে। বিএনপির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এটা বলা যাবে না।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, ভারত, রাশিয়া, চীন এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও বিএনপির জোরালো কোনো সম্পর্ক নেই। কূটনৈতিক নেতাদের গা-ছাড়া ভাবে সম্পর্কের টানাপড়েন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে।  সম্প্রতি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ সফর করে যান। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন প্রভাবশালী এই কূটনীতিক। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার কোনো বৈঠকের কর্মসূচি ছিল না। নিশা দিশাই ফিরে যাওয়ার তিন দিন পর বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। তার সঙ্গেও চেয়ারপারসন কিংবা বিএনপির নেতাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী ইস্যু নিয়ে যেসব তথ্য বাংলাদেশে গণমাধ্যমে আসছে, তা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট সবাই এ নিয়ে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন। সুতরাং এ ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের সঙ্গে আমাদের আগের মতোই সুসম্পর্ক রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর