শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

নদীর বুকে ঘরবাড়ি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নদীর বুকে ঘরবাড়ি

কুমিল্লার ডাকাতিয়া নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদীর বুকে জেগে উঠেছে সমতল ভূমি। তার ওপর শুধু ফসলই নয়, চাষ হওয়ার মতো করে স্থাপন হয়ে চলেছে ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী নদীগুলো আর নদী নেই। সেগুলোর বেশির ভাগই এখন বসতভূমি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, কুমিল্লার উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে রয়েছে মেঘনা, গোমতী, নতুন ডাকাতিয়া, পুরান ডাকাতিয়া ও তিতাস। অন্যান্য নদীগুলো হচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং এবং সদর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঘুংঘুর নদী। জানা গেছে, ঘুংঘুর নদীর ৩০ কিলোমিটারের ২০ কিলোমিটারই দখল হয়ে গেছে। বাড়িঘর, দোকানপাট আর আবাদি জমির নিচে চাপা পড়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা এই ঘুংঘুর। এ অবস্থা থেকে কুমিল্লার সদর ও বুড়িচং উপজেলার চারটি ইউনিয়নকে রক্ষা করতে ১৯৫৮ সালে নদীটি খননের পর আর কেউ এর খোঁজ নেয়নি। যে কারণে আবার বালু ও পলিতে যখন নদীর তলদেশ ও দুই পাশ ভরাট হয়েছে, তখনই এসব দখল করে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর ও ফসলের মাঠ। এ ছাড়া দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারসংলগ্ন কালা ডুমুর নদী ভরাট হয়ে কোথাও মার্কেট গড়ে উঠেছে, কোথাও ড্রেনে পরিণত হয়েছে। গোমতী নদীর পানির উৎস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঝরনা। ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্তের কটকবাজার দিয়ে গোমতী নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে দাউদকান্দির মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভেঙে এখন তার পেট ভরাট হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের সময় আসা পলি জমে নদীকে রুগ্ন করে তুলছে। নদীর মাঝে কোথাও ৪-৫ ফুট উঁচু চর পড়েছে। কোথাও ৫ ইঞ্চি পানিও নেই। একইভাবে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নতুন ডাকাতিয়া নদী। এ নদীর কারণে দক্ষিণ কুমিল্লার কৃষিতে সমৃদ্ধি এসেছিল। এখন এ নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না। এই সুযোগে দৌলতগঞ্জ বাজার এবং মনোহরগঞ্জ বাজার এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। ১৩০ ফুট চওড়া নদী কোথাও ৬০ ফুটে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে লাকসাম উপজেলা সদরের দৌলতগঞ্জ বাজারের রাজঘাট, গোলবাজার, সামনীর পুল, পশ্চিমগাঁও, সিংজোড়, হামিরাবাগ, কালিয়াপুর এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজার, আমতলী, চিতোশীসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিয়ার দুই তীরে দখলদাররা অবৈধভাবে বিভিন্ন বিল্ডিং, মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণ করায় এ নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। চান্দিনা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ক্ষিরাই নদীও মৃতপ্রায়। শুকনো এ নদীতে এখন চাষাবাদের কাজ করা হয়। এক সময় এ নদী পারাপারের জন্য বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করা হলেও এখন হেঁটেই পার হচ্ছেন লোকজন। এর জন্য নদী পাড়ের লোকজন অপরিকল্পিতভাবে নদী শাসনকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি অবৈধ দখল ছাড়াও অনেক জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ নির্মাণ করার কারণে পলি জমে চর জেগে উঠেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। একই অবস্থা মুরাদনগরের আরচী ও নলিয়া নদীর। নদীগুলো কোথাও ড্রেন কোথাও ফসলের মাঠ হয়ে গেছে। হোমনা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মধুকুপি এবং চিতিগঙ্গা। এ নদীগুলোও খননের অভাবে অস্তিত্ব হারানোর পথে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঘাগুরিয়া খাল দখল হয়ে যাচ্ছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কাকড়ী নদী পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল খালেক বলেন, নতুন ও পুরাতন ডাকাতিয়া নদীতে সম্প্রতি কিছু অংশ ড্রেজিং করা হয়েছে। নদী সংস্কারে আরও দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। নদী দখলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর