শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিলুপ্তির পথে বন্যপ্রাণী

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বিলুপ্তির পথে বন্যপ্রাণী

ইতিহাস ঐতিহ্যের ভাওয়াল শালবনের গজারি গাছের সঙ্গে হারিয়ে গেছে বন্যপ্রাণীও। একের পর এক বনের জমি দখল, গজারি গাছ কর্তনসহ নানা কারণে ভাওয়াল শালবনে থাকা বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে। এখন আর দেখা মেলে না রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হরিণ, ভল্লুক, শকুন, বনমোড়গ, শিয়াল, বাবুই, বক, বানর, সাপ, গুইসাপ, বেজি, হনুমান, বনবিড়াল, বাগডাসা, পেঁচা ইত্যাদি প্রাণীর। অনেক প্রাণী এখন তাদের চিরচেনা আবাসস্থল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের এই বিশাল বনভূমিতে এখন এসব প্রাণী যেন দুষ্প্রাপ্য। একসময় ভাওয়ালের রাজা হাতি নিয়ে দল বেঁধে এই শালবনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকারে আসতেন। আজ সেই সব কল্পকাহিনীতে রূপ নিয়েছে। ভাওয়াল রাজার অতিপ্রিয় এই শালবন চলে গেছে অসাধুদের দখলে। এখানে একে একে গড়ে উঠেছে নামিদামি শিল্প-কারখানা। শিল্পমালিকরা কারখানা গড়েই ক্ষান্ত হননি, তারা তাদের কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলেও দূষিত করছেন পরিবেশ। প্রাণিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভীর অরণ্যে এমন কিছু প্রাণী বাস করে, যা সাধারণত দেখা যায় না। আর এসব প্রাণী পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সময় বড় ভূমিকা রাখে। বনের ভিতর অবৈধ করাতকলে একের পর এক শালগাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। আর এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের অন্যায়-অত্যাচারে বনের প্রাণীরাও আজ বন ছেড়ে পালিয়েছে। বনের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, গহিনে লোকজন একের পর এক কেটে চলেছে শাল-গজারি গাছ। সরেজমিন ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে নাগা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের পাশেই বনের জমি দখলে নিয়ে পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দখলদার ব্যক্তি বলেন, ‘বন বিভাগের লোকজনকে টাকা দিয়ে জমি দখলে নিয়েছি। এখন কথামতো জমিতে দেয়াল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করব।’ এদিকে বন আইন অনুযায়ী বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া প্রাকৃতিক বন থেকে তো বটেই, বনাঞ্চল-সংলগ্ন ব্যক্তিগত বাগানের কাঠ কাটা, বেচাকেনা ও পরিবহন নিষিদ্ধ। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এসব আইন উপেক্ষা করেই চলছে বননিধন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমিদারি-স্বত্ব থেকে সরকারের হাতে আসার পর গত ৬০ বছরে বনের আয়তন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পেছনে বড় কারণ হলো প্রভাবশালীদের দখল, অবাধে বৃক্ষনিধন, অবৈধ কল-কারখানা স্থাপন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প এবং ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। এই বন ধ্বংসের ফলে বিলুপ্তির পথে এখানকার ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪১ প্রজাতির পাখি, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং আট প্রজাতির উভচর প্রাণী।

সর্বশেষ খবর