শিরোনাম
বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

তবু দলীয়ভাবে সিটি নির্বাচন

বিধি সংশোধনের কাজ চলছে, সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের

গোলাম রাব্বানী

তবু দলীয়ভাবে সিটি নির্বাচন

সিটি করপোরেশন নির্বাচনও দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় বিধি সংশোধনের কাজ করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় জাল ভোট-ব্যালট ছিনতাইসহ নানা অনিয়ম ও সহিংসতা বেশি হয়েছে। এ দুই নির্বাচন দলীয়ভাবে আয়োজন করায় সমালোচনার মুখেও পড়েছে ইসি। তা সত্ত্বেও সিটি নির্বাচন ওভাবেই করতে চলেছে সংস্থাটি।

এদিকে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি বিদায়ের আগে ডিসেম্বরের শেষার্ধে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটের পরিকল্পনা নিয়েছে। দলীয়ভাবে পৌর ও ইউপির পর এটা হবে প্রথম সিটি নির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ডিসেম্বরে এক দিনে করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে; যা কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসির মেয়াদের শেষ নির্বাচন হবে।

সূত্র জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ও পরিচালন বিধিমালার সংশোধনীর খসড়া তৈরি করেছে কমিশন সচিবালয়। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো একই ধরনের বিধান যুক্ত হচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধিমালায়। প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে সরকারি সুবিধাভোগী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে প্রার্থী হলে মেয়রদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। পৌর ও ইউপি নির্বাচনে মেয়ররা প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটির নির্বাচন একই দিনে করতে চায় ইসি। সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট এক দিনে নিয়েছিল ইসি। দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে বছর শেষে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারা আরও বলেন, কমিশন সচিবালয় থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার পর কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করে দেবে। তবে সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট এক দিনে করেছে ইসি।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, ভোটের পর নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটির ও ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটির প্রথম সভা হয়। প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করারও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাবে নারায়ণগঞ্জের ২৬ ডিসেম্বর ও কুমিল্লার মেয়াদ ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এ বছরের ২৯ জুন থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও ১২ আগস্ট থেকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কুমিল্লার ভোট শেষ করতে হবে। ভোটের জন্য সার্বিক তথ্য কমিশনে উপস্থাপনের জন্য কাজ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে, বলেন রাজীব আহসান। স্থানীয় সরকারের সিটি, উপজেলা, পৌর ও ইউপি ভোট দলীয়ভাবে করতে গত নভেম্বরে বিল পাস হয়েছে। এরপর ডিসেম্বরে পৌরসভা ও ফেব্রুয়ারি-জুন সময়ে ইউপি ভোট দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয়ভাবে সিটি করপোরেশন ভোটের জন্য নির্বাচন বিধিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিধি, ফরম, প্রতীকসহ আনুষঙ্গিক সংশোধনের খসড়াও তৈরি চলছে ইসিতে। বর্তমান ইসির মেয়াদও শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এ সময়ের মধ্যে দুটি সিটির ভোট শেষ করার কথা ভাবছেন তারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাব পেলে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যাওয়ার আগে এ দুই সিটি নির্বাচন ভালোভাবে করতে চাই। যাওয়ার আগে যাতে কোনো সমালোচনা না হয় সেটাই করব আমরা। আগেও কিছু করেছি, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা একসঙ্গে করতে চাই।’ তিনি জানান, বছর শেষে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সূচিও আমলে নিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি : সাধারণ ওয়ার্ড ২৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। মোট ভোটার ৪ লাখ ৩ হাজার ৭০৬। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩ হাজার ৯৬ ও নারী ২ লাখ ৬১০ জন। কুমিল্লা সিটি : সাধারণ ওয়ার্ড ২৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ১৯৯ ও নারী ৮৬ হাজার ৭৪ জন। ২০১০ সালের জুনে মাত্র ১৪টি ওয়ার্ডে প্রথমবারে মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন—ইভিএমে ভোট হয়। তবে কোনো পুরো সিটিতে প্রথম ইভিএমে ভোট হয় ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে। এবার কোনো ওয়ার্ডেও ইভিএমে ভোটের সম্ভাবনা নেই বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর