শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

র‌্যাবের তালিকার নিখোঁজরা কেউ বাড়িতে কেউ জেলে

২৬২ জনের মধ্যে ১৬ জনের হদিস মিলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের সন্ধান মিলছে। সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে র‌্যাব। যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন বলে সন্দেহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিখোঁজের তালিকায় যাদের নাম ছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে এসেছেন। অন্যরাও ফিরতে শুরু করেছেন। নিখোঁজদের ফেরাতে জোর তত্পরতা শুরু করেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা দেশে আছে না দেশের বাইরে চলে গেছে না কোনো জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র জানায়, নিখোঁজদের ফেরাতে কাজ শুরু হয়েছে তাদের অবস্থানের সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করা হচ্ছে। সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই তাদের মূল লক্ষ্য।

রংপুরে ৯ নিখোঁজের ৬ জনই বাড়িতে : র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকায় রংপুরের যে ৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, এর মধ্যে সাতজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের ছয়জনই বাড়িতে আছেন। একজন কারাগারে এবং ঠিকানা অনুযায়ী অপর দুজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। র‌্যাবের তালিকায় ১৬১ নম্বর ক্রমিকে থাকা সাব্বির আহমেদ ওরফে অনিন্দ (২৮) বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় রয়েছেন। তার বাবা কাজী আশফাক উদ্দিন বলেন, গত বছরের ৮ নভেম্বর নিখোঁজ হয় অনিন্দ। পরেরদিন কোতোয়ালি থানায় জিডি করি। আটদিন পর রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় সড়কের পাশ থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। ১৫৯ নম্বর ক্রমিকে থাকা রংপুর নগরীর বৈরাগীপাড়ার রেজওয়ানুর রহমান (২০) বর্তমানে রংপুর প্রেসক্লাব কমপ্লেক্সের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে গত বছর ১৩ মার্চ বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে যাই। পরে ভুল বুঝতে পেরে তিনদিন পরই ফিরে এসে কম্পিউটারের দোকানে কাজ করছি। ১৫৮ নম্বর ক্রমিকে থাকা শায়েস্তা খান (২০) এখন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। তার বাবা আবদুস সবুর খান বলেন, বাড়ির কাউকে না বলে কয়েক বন্ধু মিলে ঢাকায় বেড়াতে যায়। খোঁজ না পাওয়ায় থানায় জিডি করা হয়। তিনদিন পর বাড়িতে ফিরে আসে। ১৬০ নম্বর ক্রমিকে থাকা সাঈদ হোসেন (২০), ১৫৭ নম্বর ক্রমিকে থাকা শামিম মিয়া (২৪) এবং ১৬৪ নম্বর ক্রমিকে থাকা সাদ্দাম ইকবাল (২১) নিখোঁজের অল্প কয়েকদিন পরই বাড়িতে ফিরে এসেছেন বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিখোঁজ তালিকার ১৬৩ নম্বর ক্রমিকে থাকা মনোহরপুর এলাকার ইকবাল হোসেন (২০) প্রেমঘটিত একটি মামলায় রংপুরের কারাগারে রয়েছেন। ১৬২ নম্বর ক্রমিকে থাকা রেজাউল করিমের (২৮) ঠিকানা দেওয়া হয়েছে নগরীর মাহিগঞ্জের কলাবাড়ি। ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, তাদের কেউ সেখানে থাকে না। তবে এক সময় ছিলেন। জানা গেছে, রেজাউল পাগল প্রকৃতির ছিল। তার বাবা ওসমান গনি দিনমজুরি করতেন। এখন তারা কোথায় থাকে তা কেউ জানাতে পারেনি। ১৬৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা নগরীর পার্বতীপুর এলাকার বাসিন্দা আল আমিনের ছেলে নজরুল ইসলামের (২২) কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ নয়জনের মধ্যে ছয়জন বাড়িতে আছেন। অন্য তিনজনের একজন কারাগারে এবং দুজনের ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যশোরে পাঁচজন জঙ্গি তত্পরতায় : যশোরে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন জঙ্গি তত্পরতা চালাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনের বয়স ১৯-২৪ এর মধ্যে। একজনের বয়স ৪২। পুলিশ সূত্র জানায়, জঙ্গি তত্পরতায় জড়িতরা হলেন— শহরের শঙ্করপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার সোবহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪), শহরতলির কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ফজরে রাব্বি (২১), শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহিদি হাসান জিম (১৯), যশোর শহরের ধর্মতলা মোড় এলাকার আবদুস সালামের ছেলে রায়হান (২১) ও মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২)। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ধর্মতলা এলাকার রায়হান হিযবুত তাহ্রীরের কেন্দ্রীয় নেতা। প্রায় তিন বছর তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। মণিরামপুরের নাজিমউদ্দিন নিখোঁজের ব্যাপারে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। পুলিশের এই পাঁচজনের তালিকায় অবশ্য যশোর এমএম কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাইমা আক্তারের নাম নেই। গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মিডিয়ায় নাইমা আক্তার পরিবারসহ আইএসে যোগ দিয়েছেন বলে লেখালেখি হচ্ছে। পরিবারসহ তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস নিয়ন্ত্রিত কোনো এলাকায় রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা। এ ছাড়া র‌্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায় যশোরের মণিরামপুরের ১৪ জনের নাম আছে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, তারা সবাই কাজের সন্ধানে সমুদ্রপথে বিদেশ গেছেন। তারা কেউ জঙ্গি নন। চুয়াডাঙ্গায় নিখোঁজ দুজন জঙ্গি নয় : র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকায় থাকা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সামসুল হক ও দামুড়হুদার গুলশানপাড়ার ফরহাদ হোসেনের জঙ্গি কানেকশনের কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি পুলিশ। সামসুল মানসিক প্রতিবন্ধী ও ফরহাদ কৃষি বিভাগে চাকরি করেন। নোয়াখালীতে নিখোঁজ ছয়জন : র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় নোয়াখালীর ছয় যুবকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, সুধারাম মডেল থানার জোবায়ের হোসেন ২৫ মে থেকে নিখোঁজ রয়েছে। সে নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল।

সোনাইমুড়ীর মাঈন উদ্দিন এ বছরের এপ্রিল মাসে নিখোঁজ হয়। সে এর আগেও একাধিকবার পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে বের হয়ে যায় পরে নিজেই ফিরে আসে। একই থানার ইজাজুল হক ওরপে সজীব গত বছরের ডিসেম্বরে অবৈধ পথে দালালের মাধ্যমে ব্রাজিল যাওয়ার পথে ভারতের উত্তর প্রদেশের নইদা জেলায় গেলে দালাল পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে গেলে সজীব পুলিশের হাতে আটক হয়। গত ১১ জুলাই তার বাবা ভারত গিয়ে ১৪ জুলাই ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

বেগমগঞ্জের ইউসুফ ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নিখোঁজ হয়। সে মানসিক প্রতিবন্ধী। অয়ন দেবনাথ সম্পর্কে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে পারেনি তবে তার বাবা বাদী হয়ে ৬ জুলাই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। চাটখিল থানার হাফেজ হাবিবুর রহমান বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার দারুল কোরআন মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। সে এ বছরের মার্চ মাসে নিখোঁজ হয়।

গাইবান্ধায় নিখোঁজ দুই

র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় গাইবান্ধার দুজন রয়েছে। তারা হলেন, পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের ভেলাকোপা গ্রামের সাহাদুল ইসলামের  ছেলে সোহেল রানা (২৫) এবং সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্যভাঙ্গামোড় গ্রামের ছলিম উদ্দিনের ছেলে ইদু মিয়া ওরফে মিন্টু (৩৫)। এদের মধ্যে সোহেল রানা ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। পলাশবাড়ী থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। এ ছাড়া ইদু মিয়া ওরফে মিন্টু ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। তার বাবা ছলিম উদ্দিন বলেন, সে চট্টগ্রামের কোস্টগার্ডে কাপড় সরবরাহ করতেন। পাশেই এক বাড়িতে স্ত্রী শাপলা বেগম দুই সন্তান সাবিন ও সজীবকে নিয়ে থাকতেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর