রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন সাজে পর্যটনকেন্দ্রগুলো

ঈদে ভ্রমণ পিয়াসুদের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রতিদিন ডেস্ক

নতুন সাজে পর্যটনকেন্দ্রগুলো

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণে পুরো প্রস্তুতি নিয়েছে দেশের প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সাজিয়ে-গুছিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়ে আনা হয়েছে এগুলো। এই সঙ্গে ভ্রমণপিয়াসুদের চাহিদা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এবার পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক আগমনের আশা করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন সাজে সেজেছে পাহাড়কন্যা বান্দরবান। এখানে ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরনা, পাহাড়ের ওপর লেক, দিগন্তছোঁয়া পাহাড়, ১১ আদিবাসীর বৈচিত্র্যময় কৃষ্টি-সংস্কৃতি। পাহাড়-খরস্রোতা নদী আর দিগন্তবিস্তৃত সবুজ বনানী মিলিয়ে যে কোনো মানুষকে কাছে টানতে সক্ষম এসব জায়গা। এখানকার

উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র মেঘালয়ে রয়েছে দুটি ঝুলন্ত সেতু, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। আরও রয়েছে মিনি সাফারি পার্ক, শিশু পার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগান। শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন স্পট, যেখানে পাহাড় আর আকাশের মিতালি গড়ে উঠেছে। জেলায় আরও রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয় (স্থানীয় ভাষায় তাজিংডং), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। রয়েছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্থানও। এ ছাড়া রুমা উপজেলায় রয়েছে রিজুক ঝরনা। শহরের অদূরে রয়েছে শৈলপ্রপাতে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির অবিরাম ধারা। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন শহর বান্দরবান। এবারের ঈদে এখানে আমরা ১০ লাখ পর্যটকের প্রত্যাশা করছি। এজন্য হোটেল-মোটেলগুলোয় দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়।’ বাস মালিক কমিটির নেতা ইসলাম কোম্পানি জানান, ঈদের আগে-পরে ১০ দিনের বাসের সব টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক জানান, ‘পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। দিকনির্দেশনাসংবলিত সাইনবোর্ড টানানো এবং সড়ক সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি কাটাতে পর্যটকরা এরই মধ্যে এখানকার হোটেল-মোটেলগুলো আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। শহরের কোনো হোটেলই এখন আর বুকিং নিচ্ছে না। পাহাড়, ঝরনা, ছড়া, ঝিরি, নদীবেষ্টিত খাগড়াছড়ি জেলা। এখানে জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ; যার মধ্যে আছেন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ। মং সার্কেলের অধীন এখানে রয়েছে মং চিফ। রয়েছে রাজবাড়ি। এখানে চেঙ্গী নদী বয়ে চলেছে পাহাড়ি পথে। এ ছাড়া আলুটিলা পর্যটন স্পট, হর্টিকালচার পার্ক, রিচাং ঝরনা, সিরামুন হাতিমুড়া পাহাড়, দেবতা পুকুর, আলুটিলার গুহা পর্যটকদের কাছে সব সময়ই আকর্ষণীয়।

পর্যটকদের বরণ করতে খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়া রাঙামাটির সাজেককে নতুন রূপে সজ্জিত করা হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলো রঙিন করে সাজানো হয়েছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, ঈদ উৎসবে পর্যটক বরণে পুরো প্রস্তুত পর্যটননগরী রাঙামাটি। আবাসিক হোটেল-মোটেল, সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউসগুলোও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এরই মধ্যে অবশ্য অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে সব হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউস। সরকারি পর্যটন মোটেলেরও ঈদের পরদিন থেকে পক্ষকালব্যাপী কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটন সংস্থা ও আবাসিক হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ অতিথিদের স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে নিজেদের ভবন, অবকাঠামো ও স্থাপনাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ রাঙামাটির বৈচিত্র্যময়তা। একদিকে বর্ষার আমেজ, অন্যদিকে ঈদ উৎসব। সব মিলে রাঙামাটিতে কমপক্ষে অর্ধলাখ পর্যটক আনন্দ-ভ্রমণে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদের পরদিন থেকে রাঙামাটিতে আসা শুরু হবে পর্যটকদের। ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যবস্থাপক মো. ফরহাদ জানান, রাঙামাটিতে দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুলন্ত ব্রিজে সব সময় পুলিশের টহল থাকবে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটি জেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। যেমন রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের আকর্ষণীয় ঝুলন্ত ব্রিজ, সুখী নীলগঞ্জ মিনি চিড়িয়াখানা, ডিসি বাংলো, ক্ষুুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংরক্ষিত জাদুঘর, কাপ্তাই হ্রদ ও শুভলং ঝরনা উল্লেখযোগ্য।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত কুয়াকাটা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো সংস্কার করে নানান সাজে সাজানো হয়েছে। দোকানিরা হরেক মালের পসরা সাজিয়ে পর্যটকের অপেক্ষায় রয়েছেন। ঈদের পর কুয়াকাটায় লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগমে মিলনমেলায় পরিণত হবে দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার সৈকত। ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে পৌর প্রশাসন ও কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান নারিকেল বীথি, ফয়েজ মিয়ার বাগান, জাতীয় উদ্যান (ইকো পার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার। ভ্রমণের জন্য রয়েছে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লী। রয়েছে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর সমুদ্রের বুকে দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার বেলাভূমি। যে বেলাভূমির যে কোনো স্পটে দাঁড়িয়েই দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। একদিকে সাগর আর অন্যদিকে রয়েছে প্রকৃতিঘেরা একাধিক লেক সংরক্ষিত বনায়ন।

কুয়াকাটা পর্যটন হলিডে হোমসের ম্যানেজার মোতাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পর দুই দিন আমাদের শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। পরের তিন-চার দিনের জন্য কুয়াকাটার হোটেলগুলোর অধিকাংশ রুম আগাম বুকিং হয়ে আছে। পর্যটকরা যেভাবে যোগাযোগ করছেন তাতে মনে হচ্ছে, আগাম রুম বুকিং দিয়ে যারা ঘুরতে না আসবেন, শেষ পর্যন্ত থাকার স্থান নিয়ে তারা বিপাকে পড়তে পারেন।’

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান জানান, ১৩ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যটন এলাকা জুড়ে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশের টহলরত একটি ভ্রাম্যমাণ দল পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণ নিয়োজিত থাকবে। সঙ্গে গোয়েন্দা সদস্যদের দলও মাঠে থাকবে। পর্যটকদের সতর্কভাবে সাগরে গোসল করার জন্য জিরো পয়েন্টে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালানো হবে। এ ছাড়া সাগরে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্পিডবোট ও ওয়াটারবাস রাখা হবে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটনবহুল প্রাকৃতিক লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় অবসর সময়কে আনন্দময় করে তোলার জন্য রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। এখানে বিভিন্ন উপজেলায় টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, খাসিয়াপল্লী, এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ছায়ানিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝরনাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শিল্পকলাসমৃদ্ধ মণিপুরিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুুদ্র জাতিসত্তা, শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, চা গবেষণা কেন্দ্র, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ী, মুরইছড়া ইকো পার্ক, গগন টিলা, দোলনচাপা ইকো পার্ক, মৌলভীবাজার সদরের বর্ষীজোড়া ইকো পার্ক, মুন ব্যারাজসহ জেলার বিভিন্ন চা বাগানের জীবনধারা, সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ যে কোনো পর্যটকের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেবে। এসব স্পট সাজিয়ে তোলা হয়েছে নানান সাজে। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, পর্যটন স্পটে যাতে কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য স্পটগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর