শিরোনাম
বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাসগৃহেও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে

জিন্নাতুন নূর

বাসগৃহেও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের বিপুল প্রাণহানি একটি নিয়মিত ঘটনা। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বাসা-বাড়ির গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র ও বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসের বিষক্রিয়া বা বিস্ফোরণ, শীতাতপ যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণ ও গ্যাসলাইনের লিকেজের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটায় মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বাসগৃহও অরক্ষিত হয়ে উঠছে। আর দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞ মহল সময়মতো ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি সংস্কার এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতনতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। আধুনিক গৃহনির্মাণ পদ্ধতির অংশ হলো মলমূত্রের জন্য সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ। আর সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণে বা বিষক্রিয়ায় প্রাণহানির ঘটনা নতুন না হলেও সম্প্রতি এর মাধ্যমে দুর্ঘটনা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে ৬ জন দগ্ধ হন। ধানমন্ডির ৪ নম্বর রোডে সৃষ্ট এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেপটিক ট্যাংকে অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর গ্যাস বিস্ফোরণে তৈরি আগুন থেকেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ হন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণখানের ২৪৭ ফায়দাবাদের একটি বাসার নিচতলায় বিকট শব্দে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে ঘরে আগুন লেগে যায়। এ সময় ঘরে থাকা ৫ জন দগ্ধ হন। এ ছাড়াও কিছুদিন আগে সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণে টঙ্গীর মরকুন এলাকায় বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সাধারণত একটি সেপটিক ট্যাংক দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা না হলে এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সেখানে গ্যাস জমে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি সময়মতো তা পরিষ্কার করার সুপারিশ করেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত জ্বালানি তরল পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) বা বোতলজাত গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এর কারণ সঠিক নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পর এগুলো পুনঃপরীক্ষা না করা এবং ভেজাল ও মানহীন সিলিন্ডার সরবরাহ। বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণে আগের থেকে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানি। এর সঙ্গে তিতাস গ্যাসের সরবরাহকৃত লাইনে গ্যাস লিকেজ থেকেও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। পাবনার বেড়া উপজেলায় গত ১০ জুলাই এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক বৃদ্ধা দগ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার স্বামী আহত হন।

তিতাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তিন হাজার ৮১৯টি আর ২০১৪-১৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ হাজার ১২৩টি। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের তথ্যে, এখন প্রতি মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এর ফলে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত এলপিজি গ্যাস (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার ও বাসাবাড়িতে রান্নার কাজের জন্য সরবরাহকৃত সিলিন্ডার গ্যাসের পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিপিসির পরিচালক (মার্কেটিং) মীর আলী রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিপিসির অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। আমরা ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার শনাক্তে স্পেশাল ড্রাইভে যাচ্ছি। পাঁচ লাখ সিলিন্ডার পরীক্ষা করা রাতারাতি সম্ভব নয়, কিন্তু নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে আমাদৃের যে পরিমাণ কাজ করার কথা ছিল তা করা হয়নি বলে কাজের গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরার সেক্টর ১৩-এর একটি বাড়ির গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে একটি পরিবারের ৫ সদস্যই মারাত্মক দগ্ধ হন। এ ঘটনায় ওই পরিবারের একটি ছেলে বেঁচে গেলেও আজীবন তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই থাকতে হবে। জানা যায়, দুর্ঘটনার শিকার পরিবারের কর্ত্রী সকালে দেশলাই দিয়ে চুলা জ্বালাতে গেলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এই বাড়িতে ওঠার পর থেকেই গ্যাসের চুলা লিক হওয়ার বিষয়টি পরিবারের কর্তা বাড়িওয়ালাকে জানালেও তার কথার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ বনানীর একটি বাসায় গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ থেকে অন্তত ১২ জন আহত হন। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের ধারণা, গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে এমনটি হয়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. সূত্রে জানা যায়, পাইপের লিকেজ বা চুলার চাবি নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা চুলা চালু করে অন্য কাজ করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ঘরে ব্যবহৃত এসি থেকেও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরান ঢাকার ওয়ারীতে গত ২৭ আগস্ট এসি কমপ্রেসার বিস্ফোরিত হয়ে দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ৪ জুলাই কলাবাগানের হাতিরপুল সেন্ট্রাল রোডের এক বাসার এসি বিস্ফোরিত হয়ে তিনজন দগ্ধ হন।

সর্বশেষ খবর