বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

রেলে যুক্ত হচ্ছে নতুন ২০০ কোচ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০ মিটার-গেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনসহ মোট ৩ হাজার ৪৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়সংবলিত আটটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে দুটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। গতকাল শেরেবাংলানগরে এনইসি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে একনেকের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউএন-উইমেন ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করায় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। একনেকের পক্ষ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ আইসিটি খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মর্যাদাপূর্ণ এসব আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিশ্বে বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সুরেশ্বরী নদীর নাব্য রক্ষায় ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ ও সুরেশ্বরীর মূল্যবান বালুসম্পদ কাজে লাগাতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনার বিজয়পুরসহ আশপাশ এলাকার মূল্যবান চীনা মাটি উত্তোলনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলবে সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। গতকাল সভায় ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরেশ্বর খাল পুনঃখনন ও নিষ্কাশন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্পটিতে নার্সিং কলেজ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫০ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত ‘প্রয়াস’-এর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য দেশের প্রতিটি সেনানিবাসে প্রয়াস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দেন। সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৯২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০ নতুন মিটার-গেজ (এমজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভায় জানানো হয়েছে, রেলওয়েতে মোট ১ হাজার ১৬৫টি এমজি যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫৬টির বয়স ৩৫ বছরের বেশি। ১৩৫টি ৩১ বছরের পুরনো। রেলওয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রড-গেজ ও মিটার-গেজ, সব মিলিয়ে ১ হাজার ১২০টি কোচ সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০ কোচ সংগ্রহের প্রকল্পটি চীনা সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন পাওয়া যাবে প্রায় ৭১৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে— ১৩৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত)। ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর জেলা মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়কমানে উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল ৯৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার আজিমপুরে জুডিশিয়াল কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আজিমপুর কলোনির ৪৩ ও ৪৪ নম্বর ভবন ভেঙে ২০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১১৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজিমপুরে সরকারি বেশির ভাগ ভবনই এখন জরাজীর্ণ। সব ভবন ভেঙে নতুন করে মাত্র কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে। এতে অল্প জায়গায় সবার আবাসন করা যাবে। বাকি জায়গা শিশু ও বয়স্কদের বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। আজিমপুরের জন্য একটি কেন্দ্রীয় পৃথক সোলার প্যানেল নির্মাণের নির্দেশও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। একনেক সভায় ৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলাধীন সোনাহাট ব্রিজের কাছে ভূরুঙ্গামারী-মাদারগঞ্জ সড়কপথকে দুধকুমার নদের ভাঙন থেকে রক্ষা এবং উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ থেকে বজরা সিনিয়র মাদ্রাসা পর্যন্ত তিস্তা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর