রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জিম্মি ঢাকা মেডিকেল জড়িত কর্মকর্তারা

মাহবুব মমতাজী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন হাসপাতালের প্রভাবশালী কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংকটের সুযোগে রোগীদের জিম্মি করে চলছে তাদের বাণিজ্য।

শুধু হাসপাতালের স্টাফরাই নয়, স্থানীয় নেতারাও এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ঢামেকের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় মাইক্রোবাস দিয়ে চালানো হয় সার্ভিস।

অ্যাম্বুলেন্সের সিন্ডিকেটগুলো দালালের মাধ্যমে লাশ বা রোগী পরিবহনে কম ভাড়ার কথা বলে পরবর্তীতে বিভিন্ন খরচের নামে আদায় করে দ্বিগুণ-তিনগুণ। দিনের বেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেক্সিক্যাব বা অন্যকোনো বাহনের ব্যবস্থা হলেও রাতের বেলায়, কিংবা দূরপাল্লায় চলাচলের জন্য রোগীর স্বজনদের এ সিন্ডিকেটের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। আবার ঢামেক থেকে কোনো রোগীকে ঢাকার বাইরে কিংবা অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য সেখানকার সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে বাধ্য করা হয়। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নিতে হলে সিন্ডিকেট চক্রকে দিতে হয় টাকা। অভিযোগ অনুযায়ী, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের প্রধান সড়কের দুই পাশ ঘেঁষে সবসময়ই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুলেন্স স্টিকারের শতাধিক গাড়ি। এগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তির ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি নামের পাশে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা রয়েছে। এসব কথিত অ্যাম্বুলেন্সের অধিকাংশেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। নেই দক্ষ চালকও। সহকারী দিয়েই তা পরিচালনা করা হয়, যাদের কারই নেই বৈধ লাইসেন্স। হাসপাতাল থেকে বের হলে রোগী কিংবা রোগীর আত্মীয়স্বজনদের ঘিরে ফেলে দালাল চক্রের সদস্যরা। কম টাকায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বললে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজন। ফলে ঢামেকে চিকিৎসা নিতে গ্রাম থেকে আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দালালদের দর কষাকষি ও ঝগড়া নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে বাইরের থেকেও সেখানে আসে না কোনো অ্যাম্বুলেন্স। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়ায় যেতে রাজি হয় অনেককে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী এ সিন্ডিকেটের সদস্য। ঢামেক হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুমন আলীর একটি (ঢাকা মেট্রো ছ-৭৪-০০৯১), একই সংগঠনের আরেক নেতা দিনারের একটি (ঢাকা মেট্রো ছ-৭১-০৬৬৩), ঢামেক হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রোবাস সমিতির সাবেক সভাপতি হারুন ভাণ্ডারির একটি (সিলেট ছ-৭১-০০১৪), ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জামাল সর্দারের একটি (ঢাকা মেট্রো ছ-৭১-১৩০৯) অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। ঢাকা মেট্রো-চ-০২-৪৫১০ ও ঢাকা মেট্রো ছ-৭১-০১৫৬ নম্বরের অ্যাম্বুলেন্স দুটির মালিক বার্ন ইউনিটের কর্মচারী মো. ফারুক। বহির্বিভাগের সুইপার সর্দার সামসুদ্দিন বাবুর একটি (ঢাকা মেট্রো চ-০২-১৬২৮), হাসপাতালের ড্রাইভার সোবহানের একটি (ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-০১৩৬) এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুস ছাত্তারের দুটি অ্যাম্বুলেন্স আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ড্রাইভার মনির, ড্রাইভার আবুল, দারোয়ান আবুল বাশার, সুইপার কালাম ও জসিমেরও একটি করে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। আবার হাসপাতালের কর্মচারীদের সহায়তায় বহিরাগতরাও মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে বাণিজ্য করছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢামেক হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রোবাস সমিতির সাবেক সভাপতি হারুন ভাণ্ডারি বলেন, হাসপাতালের অধিকাংশ স্টাফের অ্যাম্বুলেন্স আছে। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মোয়াজ্জেম ও হাশেম। কোনো রোগীকে জিম্মি করা হয় না। গেটের বাইরে গাড়ি থাকে। যাদের সঙ্গে বনিবনা হয় তারা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেয়। ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে আটটিই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর বাকিগুরো জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। সেগুলোর চালক সংকটের কারণে সহকারী দিয়ে কাজ চালানো হয়। রোগী ছাড়াও সেগুলো দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও আনা-নেওয়া করা হয়। ঢাকা মহানগরীর যে কোনো স্থানে ভাড়া ৩০০ টাকা। এর বাইরে অতিরিক্ত প্রতিকিলোমিটারের জন্য ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা পুলিশ নিয়ে ওইসব অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সরিয়ে দিলেও পরে আবার সেগুলো এনে স্ট্যান্ড বানানো হয়। হাসপাতালের প্রবেশপথ পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনের। তারা সেই দায়িত্ব পালন করে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর