সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জাতীয় কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রী

দেশকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতকরণসহ এসডিজি-৬ অর্জনে বাংলাদেশকে বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠার কৌশলপত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৬) বাস্তবায়নে আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা (এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা-৬) : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করে।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি-৬ অর্জনেও বাংলাদেশ যাতে বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বা ‘রোল মডেল’      হয়ে উঠতে পারে তার কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এমডিজির মতো এ ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য অর্জিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে। জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিষয়ক প্যানেলের বিশেষ উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ইতিমধ্যে ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি, ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অ্যাক্ট-১৯৯৬, জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন নীতিমালা (১৯৯৮) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (১৯৯৭) প্রণয়ন করেছে। সেই সঙ্গে পানি আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, শতবর্ষের পরিবর্তনের গতি মাথায় রেখে পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ হচ্ছে—‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২০১০’। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পানির গুরুত্ব বুঝতে পেরে জাতির পিতা ১৯৭২ সালে আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন গঠন করেন। স্বাধীনতার পরই তিনি উপলব্ধি করেন বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নের সঙ্গে নদ-নদী ও পানিসম্পদ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকার ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছে। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের পরিমাণ বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে (দশমিক ৮৮) নেমে এসেছে, যা ২০০৩ সালেও ৪২ শতাংশ ছিল। এ বিষয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই দুটি ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য আসবে। তিনি বলেন, কৃষিতে সেচ কিংবা শিল্পায়নসহ শহর উন্নয়নের কারণে পানির চাহিদা বেড়েই চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাবসহ বাংলাদেশে খরায় পানির সংকট এবং বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগে অঢেল পানির অপচয়ও হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে শুকনো মৌসুমে এখনই পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল—‘উন্নয়ন হবে দেশীয় পদ্ধতিতে কিন্তু মান হবে আন্তর্জাতিক’। তার দেখানো পথেই পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থিত পানির সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ শ্রেণির জনগোষ্ঠী (শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে) কিংবা বিশেষ এলাকাভিত্তিক (লবণাক্ততা কিংবা আর্সেনিক যুক্ত এলাকা) বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দক্ষতা এবং দ্রুততার সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, এমডিজিতে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের কথা থাকলেও আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে তা সরবরাহ করেছি। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থান তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর মরক্কোর মারাকাস শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের বক্তব্যে আমি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছি।

অনুষ্ঠানে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী এম নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ খবর