শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুরের সুধায় মোহিত শ্রোতা

ভোররাতে উলহাসের খেয়ালের জাদু

মোস্তফা মতিহার

সুরের সুধায় মোহিত শ্রোতা

খেয়ালে খেয়ালের রাগ-রাগিনীতে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় রাতে সুরের সমুদ্রে ঢেউ তুললেন ভারতের প্রখ্যাত পণ্ডিত উলহাস কশলকার। সেই ঢেউয়ে ভালোলাগার দোলা দিয়ে গেল আর্মি স্টেডিয়ামের কয়েক হাজার দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ের মন্দিরে। শুদ্ধতার মোহে সমগ্র আর্মি স্টেডিয়ামে নেমে আসে রাজ্যের নীরবতা। সুরের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে সঙ্গীতের সমজদাররা যেন সাধনায় রত হলেন। এই কিংবদন্তির সুরের খেলায় বিনিদ্র রজনীকে সঙ্গী করে নেয় সুরের মেহমানরা। সুরের সঙ্গে যেন মায়াপুরীর মায়া নিয়ে এসেছিলেন শিল্পীরা। আসরের বাসিন্দারাও পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে সকালে টিএসসি সবুজ চত্বরে হাজির হন। বসে প্রাণের মেলা। জাদু প্রদর্শনী, নৃত্যনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্মৃতিচারণ আর আড্ডায় কাটে তাদের সারা দিন। একসঙ্গে সুখে-দুখে হলজীবনের সঙ্গীরা একে অপরকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। জড়িয়ে ধরে অনুভূতির প্রকাশ ঘটান। বান্ধবীরা একে অপরের কর্মজীবনের খোঁজখবর নিতে নিতে মেতে ওঠেন খুনসুটিতেও। দীর্ঘদিনের হলজীবনের সঙ্গীদের কাছে পেয়ে স্মৃতি ধরে রাখতে ফটোসেশনের পাশাপাশি সেলফি তুলতেও বাদ রাখেননি। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক রোকেয়া হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ। অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, এ ধরনের সম্মিলনে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায়। অ্যালামনাইরা এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে দক্ষতার সাক্ষর রেখে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এই রোকেয়া হলেরই ছাত্রী ছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তার আদর্শ অনুসরণ করতে সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, এ দেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি সংকটপূর্ণ মুহূর্তে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও এই রোকেয়া হলের ছাত্রী ছিলেন। রোকেয়া হলের একজন ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেওয়াটা আমার কাছে সবসময় গর্বের বিষয়। বিকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি বলেন, শুধু নারীদের কর্মক্ষেত্রে আনাই মূল বিষয় নয়, সব ক্ষেত্রে তাদের জন্য নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাই মুখ্য বিষয়। এর মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে। শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার পাশাপাশি যেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে নারীরা এগিয়ে যাবে সে সব ক্ষেত্রে তাদের জন্য সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের কল্যাণে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। এ নারীরা আজ দেশের জনশক্তির পাশাপাশি শ্রমশক্তি। এই শ্রমশক্তি ও জনশক্তিকে বাদ দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।

 বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রোকেয়া হলের সাত প্রাক্তন শিক্ষার্থী—বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাঈদা খানম, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ফাহমিদা খাতুন, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, ক্রীড়া সংগঠক রাফিয়া আক্তার ডলি, সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহকে সম্মাননা দেওয়া হয়। হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. রওশন আরা ফিরোজের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম বেগম ও অধ্যাপক সালমা আখতার।

সর্বশেষ খবর