শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানেরমেলা প্রতিদিন

ছুটির দিনে জমজমাট বইমেলা

মোস্তফা মতিহার

ছুটির দিনে জমজমাট বইমেলা

বইমেলায় গতকাল ছিল বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর মালিবাগ থেকে মেলায় এসেছেন সুমনা ইয়াসমিন সোমা নামের এক তরুণী। মেলায় এসে কেমন লাগছে আর কি বই কিনলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এই তরুণী বলেন, মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। প্রতিবারই মেলায় আসি। এ বছর আজই প্রথম এলাম। শেষের দিকে আবারও আসব।

প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের পুরনো কয়েকটি বই কেনার পাশাপাশি রান্না ও রূপচর্চা বিষয়ক বই কিনেছেন বলেও জানান সোমা। কথা প্রসঙ্গে চারুলিপির স্বত্বাধিকারী হুমায়ূন কবির বলেন, শুরুর দিকে মেলা জমে উঠেনি বলে লেখক ও প্রকাশকদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করছিল। কিন্তু এখন মেলায় আগত প্রায় সবাই বই কিনছেন। গতকাল বিকালে মেলায় এসেছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। জাফর ইকবাল আসতেই তাকে ছেঁকে ধরে শিশু-কিশোররা। তাদের অটোগ্রাফ আর আবদার মেটাতে হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে আরও এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও হরিশংকর জলদাস।

নতুন বই : তথ্যকেন্দ্র জানায়, গতকাল মেলার দশম দিনে নতুন বই এসেছে ৩১৩টি। এর মধ্যে গল্প ৪১, উপন্যাস ৬৪, প্রবন্ধ ৮, কবিতা ১০৯, গবেষণা ৫, ছড়া ৯, শিশুসাহিত্য ৬, জীবনী ৬, মুক্তিযুদ্ধ ৬, নাটক ২, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৩, ইতিহাস ৩, রাজনীতি ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১, রম্য/ধাঁধা ৪, ধর্মীয় ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৭ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর বই এসেছে ৩৩টি। এ ছাড়া ৪৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে মঞ্চে। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো : ড. কাজী জাহেদ ইকবালের ‘বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনী (১৯৭২-১৯৮৮): প্রেক্ষাপট ও পর্যালোচনা’, ধ্রুবপদ; আফজাল হোসেনের ‘কোন জোনাকি অন্ধকার চেনে না’, অনন্যা; আনিসুল হকের ‘হাসির গল্প সমগ্র’, অন্বেষা; মোহিত কামালের ‘বিষাদনদী’, অন্যপ্রকাশ; প্রভাস আমিনের ‘সুখী মানুষের জামা’, পিয়াস মজিদের ‘স্মৃতিসত্তার সৈয়দ হক’, অন্যপ্রকাশ; ফরিদুর রেজা সাগরের ‘প্যার্টিকের গরিলা ও অন্যান্য গল্প’, পাঞ্জেরি; সেলিনা হোসেনের ‘কিশোর গল্প সংকলন’, অক্ষর প্রকাশনী; নির্মলেন্দু গুণের ‘দেশান্তর’ ও ‘কালো মেঘের ভেলা’, অনিন্দ্য প্রকাশ; আবু হাসান শাহরিয়ারের ‘চম্পু বচন’ ও ‘আবু হাসান শাহরিয়ার প্রবন্ধ সংগ্রহ’, নাগরী; হানিফ সংকেতের ‘সৎ খোঁজার পথ খোঁজা’, অনন্যা, কবি মুস্তাফিজ শফির ‘ঈশ্বরের সন্তানেরা’ কথাপ্রকাশ, ‘নির্বাচিত অনুসন্ধান’, রয়েল পাবলিশার্স।

মূল মঞ্চ : গতকাল বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা ও ১১ মার্চ ১৯৪৮ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আহমাদ মাযহার এবং মো. মশিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনা এবং আবুল ফারাহ্ মো. তোয়াহার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শিল্পীরা।

এর আগে সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী।

মাহবুবুল হক শাকিলের বইয়ের সংকলন : মাহবুবুল হক শাকিলের ৩টি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ নিয়ে ৪টি বইয়ের একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। ২/৩ দিনের মধ্যে যদি সবগুলো বইয়ের সফট কপি সংগ্রহ করতে পারে তাহলে এই মেলাতেই এবং একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই বাংলা একাডেমি এই কাজটি সম্পন্ন করবে। অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত মাহবুবুল হক শাকিলের প্রথম গল্পগ্রন্থ ও ফেরা না-ফেরার গল্প এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবেরের প্রস্তাবনায় সভাপতির বক্তৃতায় এই ঘোষণা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বিকালে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান। এর আগে শাকিলের প্রথম গল্পের বইটি নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এবং মঈনুল আহসান সাবের। এ ছাড়া আরও বক্তৃতা করেন মাহবুবুল হক শাকিলের পিতা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক। উপস্থিত ছিলেন তার জননী, ছোট ভাই ও  স্ত্রী  অ্যাডভোকেট নীলুফা আনজুম পপি। স্বাগত বক্তৃতা করেন অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শাকিলের কবিতার বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে বুঝলাম, সে অনেক বড় মাপের লেখক।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, শাকিল তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মাঝে আজীবন এদেশের সাহিত্যাঙ্গনে অমর হয়ে থাকবেন। তার মাঝে বিস্ময়কর প্রতিভা ছিল। এ সময় তিনি কালের কণ্ঠে ছাপানো একটি গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শাকিলের একটি গল্প কালের কণ্ঠে ছাপা হওয়ার পর আমি নিজেই বিস্মিত হই।

মঈনুল আহসান সাবের বলেন, গৌরবে, মেধা, মননে আর আন্তরিকতায় শাকিল এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। একজন কবি হয়েও গল্প নির্মাণের সব গুণাবলিই তার মাঝে ছিল। তার প্রতিটি গল্পই মানসম্পন্ন। মাহবুবুল হক শাকিলের নামে পুরস্কার প্রবর্তন ও তার বইগুলোর সংকলন প্রকাশের প্রস্তাবনা রাখেন মঈনুল আহসান সাবের।

অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য ১৫০ টাকা।

সর্বশেষ খবর