রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে শত শত অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার

প্রতিদিন ডেস্ক

৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ-নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশ বহাল রাখার আবেদন নবম সার্কিট আপিল কোর্টেও নাকচ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, ফ্লোরিডা, ক্যানসাস এবং নিউইয়র্কে অভিযান চালিয়ে শত শত অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস)-এর এজেন্টরা। তবে আইস তথা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জিলিয়ান ক্রিস্টিনসেন জানান যে, তারা আটলান্টা ও লসএঞ্জেলেস সিটিসহ মোট ৪ সিটিতে অভিযান চালিয়েছে। কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এই কর্মকর্তা। অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, এহেন অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে অভিবাসী সমাজ। ‘মেইক দ্য রোড ইন নিউইয়র্ক সিটি’র মুখপাত্র ওয়াল্টার বেরিয়েন্টোস গণমাধ্যমকে বলেছেন, গ্রেফতার-আতঙ্কে তছনছ হয়ে গেছে জনজীবন।’ ওয়াল্টারসহ আরও কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার অভিযান চালানো হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লসএঞ্জেলেস, ভিস্টা. পমোনা এবং ক্যাম্পটন সিটি, টেক্সাসের অস্টিন, ডালাস এবং পিফ্লুগারভিলে, ভার্জিনিয়া রাজ্যের আলেক্সান্দ্রিয়া ও এনাডেল, নর্থ ক্যারলিনার চার্লটি ও বার্লিংটন, ফ্লোরিডার প্ল্যান্ট সিটি, ক্যানসাসের উইচিটা, ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো এবং নিউইয়র্কের হাডসন ভ্যালি এলাকায়।’ সঠিক সংখ্যা তারাও জানতে সক্ষম হননি বলে এসব সংস্থার পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়। তবে ৫ শতাধিক অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিবাসনের আইন লংঘন ব্যতীত অন্য কোনো অভিযোগ নেই। খবর এনআরবি নিউজের। শুক্রবার ফেসবুকে প্রদত্ত সাপ্তাহিক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার প্রশাসন আপনাদের নিরাপত্তা সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ, সে জন্যই আমরা ভয়ঙ্কর উগ্রপন্থি, সন্ত্রাসী এবং চরমপন্থিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। অত্যন্ত দৃপ্ত প্রত্যয়ে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে, সংবিধানকেও রক্ষা করতে হবে এবং আমাদের নাগরিকদের সত্যিকারের সমৃদ্ধি দিতে হবে।’ টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, ক্যানসাস এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ৪৮ ঘণ্টার এ অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।

 নিউইয়র্ক অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ানদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’  (ড্রাম) এর সংগঠক কাজী ফৌজিয়া শুক্রবার রাতে এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আদালতে চপেটাঘাত খেয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প প্রশাসন চুপিসারে অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানের প্রতিবাদে শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত একটা) নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কে এক সমাবেশ হচ্ছে। কাজী ফৌজিয়া বলেন, ‘নিউজার্সির এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থানরত এক বাংলাদেশির কাছে থেকে জানতে পেরেছি যে. গত ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অন্তত ৬০ জনকে সেখানে আনা হয়েছে। শিগগিরই এদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ এর মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছে বলে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। এদিকে, ৭ মুসলিম রাষ্ট্রের অধিবাসীসহ বিশ্বের মুসলিম রিফ্যুজিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার রোধে জারিকৃত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আপিল কোর্টেও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন আরেকটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। সোমবার অথবা মঙ্গলবার এ আদেশ জারি হতে পারে বলে হোয়াইট হাউসের সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানান। ১০ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে আসার সময় এয়ারফোর্স ওয়ানে কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প নিজেও এ ধরনের একটি নির্বাহী আদেশ জারির কথা ভাবছেন বলে জানান। ট্রাম্প বলেছেন, সেই আদেশ হবে আরও কঠোর এবং সবকিছু বিবেচনায় রেখেই করা হবে। সিয়াটলের ফেডারেল কোর্টের পর ক্যালিফোর্নিয়ার নবম সার্কিট কোর্টেও ট্রাম্পের ‘ট্যাভেল ব্যান’ আদেশ স্থগিত হয়ে পড়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচলিতবোধ করলেও তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চান না। তার স্থলে তিনি নতুন আরেকটি আদেশ জারি করতে চান। এদিকে, অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযান চালুর সংবাদে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আতঙ্কে নিপতিত হয়েছেন। নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, প্যাটারসন, হ্যামট্রমিক, ডেট্রয়েট, হিউস্টন, ডালাস, শিকাগো, আটলান্টা, ময়ামী প্রভৃতি সিটিতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের অভিবাসনের মর্যাদা নেই। সারা আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা সোয়া কোটি বলে সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে। এর মধ্যে লাখ খানেকের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর