বহু প্রতীক্ষার পর ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে ৯৮ জন কর্মী নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে প্রথম ফ্লাইট ঢাকা ছেড়েছে। গতকাল রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের (বিজি ৮৬) একটি ফ্লাইট বাংলাদেশি এই কর্মী নিয়ে যাত্রা করে।
প্রথম এই ফ্লাইটে থাকেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ২ জন কর্মকর্তাসহ রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএমইটি এবং বায়রা নেতারা উপস্থিত থেকে কর্মীদের বিদায় জানান। এর আগে অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মীদের যাচাই-বাছাইসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় আরও চার শতাধিক কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে। সেবা খাত ও শিল্প-কারখানার জন্য এসব কর্মী পাঠানো হচ্ছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন মালয়েশিয়ায় প্রথম ফ্লাইট যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গতরাতে জানান, সেবা খাতের ৯৮ জন কর্মী প্রথম পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকিরা যাবেন।সার্ভিস সেক্টরের আওতায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ‘কার্গো লোডার’ পদে প্রথম ব্যাচের কর্মীরা নিয়োগ পেয়েছেন। বায়রার সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। এখানে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা নেই। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তাদের একটি দল এরই মধ্যে বাংলাদেশে এসে বাছাই করা ৪০০ কর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা কাজে দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছেন। পাশাপাশি চলছে বায়ো-মেডিকেল পর্ব। সব কিছুই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) অনুসৃত বিধান অনুযায়ী করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হওয়ায় কেউ আর অবৈধ পন্থায় সে দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। কারণ জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে একজন কর্মী তিন বছরের ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে আরও দুই বছর ভিসা নবায়ন করতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগকর্তা চাইলে কর্মীরা আরও পাঁচ বছর সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। ভিসা নবায়ন ফি নিয়োগকর্তাই বহন করবেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়া সরকারের চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে—যারা যাচ্ছেন তাদের দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা হবে। চাইলে ওভারটাইমও করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে। চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকা মাসিক বেতনই কর্মীদের দেওয়া হবে। বেতন পরিশোধ করা হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। কোনো কোম্পানি বেতন-ভাতা কম দিতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য চলে যাবে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে। সুতরাং বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো নিয়োগকর্তাই জালিয়াতি করতে পারবেন না। এ ছাড়া আগে কর্মীদের কোনো বীমা সুবিধা ছিল না। এখন যারা যাচ্ছেন তাদের প্রতিজনের দুই লাখ টাকার বীমা সুবিধা থাকছে। আর অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বায়োমেডিকেল করা হচ্ছে। প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এর আগে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, কোনোভাবেই এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হতে দেওয়া হবে না। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। যাদের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো সেসব রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাবে। এজন্য দুই দফায় ৯৫৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির নামও পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তারা রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন করে কর্মীর চাহিদা দেবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এর পরই জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় অবশেষে গতকাল থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে।