শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

কারাগারে মোবাইল ব্যবহার ৮ মার্চ থেকে

মাহবুব মমতাজী

জেলখানার কয়েদিদের চিঠি বিনিময় নিয়ে রয়েছে অসংখ্য গান, গল্পগাথা। কালের খেয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে চিঠি। এখন চোখের পলকে মোবাইলের মাধ্যমে খবর পৌঁছে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত জনের কাছে। তাই নতুন বছরের উপহার হিসেবে কারাবন্দীদের জন্য আসছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা। এ বছরের ৮ মার্চ কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন কারাবন্দীরা। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল  জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মনজুর হোসেন। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে উদ্বোধনের এ দিন নির্ধারণ করা হয় বলে জানান তিনি। কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। এই সেবা চালুর প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে। ছয় মাসে ভালো ফল পাওয়া গেলে তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জেও চালুর চিন্তা রয়েছে। তবে এই সেবা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, জঙ্গি, অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলার আসামিরা নিতে পারবেন না। বৃদ্ধ, মহিলা ও কয়েদিরা মোবাইলফোন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। জানা যায়, কারাগারে অবৈধ মোবাইলের ব্যবহার চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এ কারণে অপরাধীরা এর সুযোগ নিতেন। কারাগারে বসেই অপরাধীরা বাইরের নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছিল। অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্ত অন্য বন্দীরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেতেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেলেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। অথচ কারাগারের বন্দীদের মোবাইল সুবিধা দিতে প্রায় দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুশাসন দিয়েছিলেন। কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে জানান, কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল কারাগারে অবকাঠামো তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানেই প্রথম শুরু হবে এই সেবা প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে আইটি সুবিধা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন বিভাগ। ইতিমধ্যে কারা অধিদফতরের সঙ্গে এটুআই এর একটা চুক্তিও হয়েছে। টেলিটকের মাধ্যমে কারাবন্দীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে নতুন কারাগার উদ্বোধনের সময় কারা কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি অনুশাসন দেন। তাতে তিনি বলেন, অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যবহার প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি কারাগারে অনুমোদিত মোবাইল ফোন সেন্টার স্থাপন এবং বন্দীরা যাতে ন্যায্যভাবে মোবাইলে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল কারাগারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার। অপরদিকে কাশিমপুর কারাগারের অনিয়ম তদন্তে ২০১৪ সালে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশেও কারাগারে বৈধভাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সাম্প্রতিক এক বৈঠকেও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। ওই সভা থেকে দেওয়া সিদ্ধান্তের ছয় মাস পরে মোবাইলফোন ব্যবহারের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। টাঙ্গাইল কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মনজুর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মোবাইল ব্যবহারের জন্য আমাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যে খসড়া নীতিমালা করা হয় তার আলোকেই প্রকল্পটি পরিচালনা করা হবে। খসড়া নীতিমালায় একজন বন্দী মাসে সর্বোচ্চ দুবার ১৫ মিনিট করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন।

সর্বশেষ খবর