বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইসিবিতে অস্থিরতা নভেম্বরের চিঠিতে

আমানত তুলে ফেলছে বাণিজ্যিক ব্যাংক, সরকারি আমানত চেয়ে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ ব্যাংকের নভেম্বরের একটি চিঠিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এ  অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যাংক মেয়াদি আমানত রেখেছিল, তার একটি অংশ তারা তুলে ফেলছে। নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংক আমানত প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে পারছে না আইসিবি। সংকট মোকাবিলায় এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে সরকারি এই বিনিয়োগ সংস্থাটি।

জানা গেছে, গত নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে আইসিবির মেয়াদি আমানতে তাদের (ব্যাংকগুলোর) যে বিনিয়োগ রয়েছে, তার একটি বড় অংশ তুলে ফেলার নির্দেশনা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আইসিবিতে মেয়াদি আমানত স্কিমে রাখা তাদের বিনিয়োগের একক গ্রহীতার ঋণ সীমার (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেয়। এতেই বিপাকে পড়ে আইসিবি। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংককে সীমার অতিরিক্ত অর্থ বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে আইসিবি। এখন নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংক বিনিয়োগ প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। ওই টাকা পরিশোধের জন্য এখন শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে আইসিবির যে বিনিয়োগ আছে তা তুলে ফেলতে হবে। কিন্তু এটা করতে গেলে পুঁজিবাজারেও তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে শেয়ারবাজারে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমানের কাছে পাঠানো চিঠিতে আইসিবির এমডি কাজী ছানাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪-এর দুটি সার্কুলার আকস্মিকভাবে ২০১৭ এর নভেম্বরে এসে কার্যকর করায় ৭-৮টি ব্যাংক একযোগে তাদের বিনিয়োগ থেকে সীমার অতিরিক্ত অর্থ প্রত্যাহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে একদিকে যেমন আইসিবির পক্ষে বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে স্পর্শকাতর এই সময়ে সিকিউরিটিজ বিক্রির মাধ্যমে অল্প সময়ে বড় অংকের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হলে শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইসিবির এমডি আরও জানান, এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংককে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একক ঋণ গ্রহীতার সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমান অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিতে এ মুহূর্তে অন্য ব্যাংকগুলোর চাহিদামাফিক অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য ব্যাংকবহির্ভূত সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ পরিশোধ করা যেতে পারে বলে মনে করছে আইসিবি। এ জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যাতে সরকারি সংস্থাগুলোকে চিঠি লিখে আইসিবিতে আমানত রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করে সেটাই আশা করছে সরকারি বিনিয়োগ সংস্থাটি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত রাখার বিষয়ে আগে থেকেই সার্কুলার আছে। নতুন করে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ওই সার্কুলার অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ আমানত সরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখতে হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা যায়। তাই আইসিবিতে আমানত রাখার বিষয়ে পৃথক কিছু করার দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর