বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই সিটিতে ব্যক্তি ইমেজকে প্রাধান্য কাউন্সিলরদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও গাজীপুর প্রতিনিধি

দুই সিটিতে ব্যক্তি ইমেজকে  প্রাধান্য কাউন্সিলরদের

খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় অনুসারী হলেও তারা মূলত ব্যক্তি ইমেজ, পারিবারিক ও বংশীয় অবস্থানের গুরুত্ব ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। গাজীপুরে একটি দল অনুসারী একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী একই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সে ক্ষেত্রে সবাই দলীয় পরিচয়ে ভোট চাইলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য তারা দল নয়, ব্যক্তি ইমেজকে ভোটের মাঠে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার অনেকে নিজেকে নির্দলীয় দাবি করে নির্বাচনী মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাইছেন। এসব কারণে আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনুসারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের দলের মেয়র প্রার্থীর জন্য ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা জানিয়েছেন, এবারের সিটি নির্বাচনে ভিন্ন আমেজ ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজে ঝুঁকছেন ভোটাররা। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে টানটান উত্তেজনা ছিল। তবে এবার ভোটার ও প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা অনেকটাই নীরব। প্রধান দুই দলের একাধিক দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের রাগ, ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। মনোনয়নবঞ্চিত মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলটির সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে নগরীতে জনসমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানেরও নগরীতে জনপ্রিয়তা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এবারের সিটি নির্বাচনে প্রধান দুই দলের মনোনয়নবঞ্চিত এ দুই নেতার অনুসারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রার্থীরা দলীয় মেয়র প্রার্থীর জন্য ভোটের মাঠে কতটা সরব থাকেন সেটাও দুই দলের পর্যবেক্ষণ জরুরি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনুসারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব জানা গেছে।

খুলনা : খুলনা সিটি নির্বাচনে এবারও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজের দিকেই নজর রয়েছে ভোটারদের। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজই প্রাধান্য পাচ্ছে। আঞ্চলিক, বস্তিবাসী ও সবদলের ভোট পেতে দল অনেকে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছেন।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল ভোটারদের সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখানে নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে। একই কথা বলেছেন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সচেতন ভোটাররা। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার রবিউল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা সাধারণত তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। এ কারণে ব্যক্তি ইমেজটি ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি কাজে লাগবে। নির্বাচনী ইশতেহারেও প্রার্থীরা দলের থেকে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের কথা বেশি তুলে ধরছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এলাকার উন্নয়নে অনেক চাহিদা থাকে ভোটারদের। দলীয় বিবেচনায় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া প্রার্থীরা দলমত নির্বেশেষে ভোটারদের সমর্থন পেতে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করেন না। জানা যায়, ২০১৩ সালে খুলনা সিটি নির্বাচনে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নির্বাচিত কাউন্সিলরই ছিলেন বিএনপি ঘরানার। কিন্তু নির্বাচনের পর মূল দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। এ ছাড়া দলীয় বিভেদের কারণে এবার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. মুনিরুজ্জামান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিশ্বাষ (প্যানেল মেয়র), ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কে এম হুমায়ুন কবির ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুহা. আমানকে দলীয় মনোনয়নই দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাদের প্রত্যেকে ব্যক্তি ইমেজের ওপর ভরসা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন। পরে অবশ্য বিএনপি ১২ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডকে উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে।

ওই চার কাউন্সিলরের সমর্থকদের মতে, বিগতদিনে তাদের কর্মকাণ্ডই ভোটারদের কাছে আগ্রহের বিষয়। বিজয়ী কাউন্সিলররা এলাকার উন্নয়নে কী ভূমিকা রেখেছেন তা নিয়ে চলে চুলচেরা আলোচনা। ফলে দলের থেকে ব্যক্তি ইমেজ বড় হয়ে দেখা দেয়।

আবার বিপরীত চিত্রও রয়েছে খুলনা সিটিতে। নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথমে কাউন্সিলর মনোনয়ন দেওয়া হয় বীরেন্দ্র নাথ ঘোষকে। পরে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয় ফয়েজুল ইসলাম টিটোকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বীরেন্দ্র নাথ ঘোষ। এ নিয়ে মহানগরী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেছেন। তাদের মতে, দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সুখে-দুঃখে এলাকার অভিভাবক হিসেবে বীরেন্দ্র নাথ ভোটারদের পাশে ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াটা নির্বাচনে তার জয়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে শেখপাড়া নজরুল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুষমা বালা মনে করেন, ‘কাউন্সিলর পদটি সার্বক্ষণিক জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্য যিনি যত বেশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে পারবেন সুখে-দুঃখে সরাসরি সময় দিতে পারবেন, তিনি জনসাধারণের ভোট বেশি পাবেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন ততটা গুরুত্ব পায় না।’

সর্বশেষ খবর