বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেন্ট্রাল আফ্রিকার লাইফ লাইন রক্ষায় নিবেদিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা

শিমুল মাহমুদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকা থেকে

আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক’-এর লাইফ লাইন রক্ষায় নিবেদিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। তারা দেশটির ৬১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একমাত্র মহাসড়ক দিয়ে সপ্তাহের ছয় দিন খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা দেয়। তা না হলে না

খেয়েই মরতে হতো অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষকে। এই ব্যবস্থাকে জাতিসংঘের পরিভাষায় বলা হচ্ছে, মেইন সাপ্লাই রুট বা এমএসআর। দেশটির রাজধানী বাংগিসহ সারা দেশের মানুষের খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আসে ক্যামেরুন বর্ডার দিয়ে। ল্যান্ডলড কান্ট্রি হিসেবে পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো দেশ থেকে কোনো পণ্যসামগ্রী আনার সুযোগ নেই তাদের। এক সময়ের ফ্রান্স কলোনি সেন্ট্রাল আফ্রিকার দুঃসময় যেন কাটতেই চায় না। দীর্ঘ ৬১০ কিলোমিটার একমাত্র মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অনেক সশস্ত্র গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। ফলে যে কোনো সময় লুট হয়ে যেতে পারে পণ্যবাহী ট্রাক। এজন্য পুরো রাস্তাটিতেই কড়া পাহারা রাখতে হচ্ছে। কথিত আছে, রাস্তায় কোনো পণ্যবাহী গাড়ি বিকল হলে স্থানীয়রা মনে করে, ঈশ্বর তাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। তাই তারা সেটি নিজ দায়িত্বেই লুটে নেন। দেশটি ১৯৬০ সালে স্বাধীন হলেও ফ্রান্স সিন্দাবাদের ভূতের মতো এখনো এই দেশের কাঁধে ভর করে আছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পারস্পরিক হানাহানি বেড়ে যাওয়ায় জাতিসংঘ ২০১৪ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকার শান্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জীবনবাজি রেখে কাজ করছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। স্বাধীনতার পর এই দেশে ফ্রান্স সমর্থিত সরকারের সঙ্গে জনগণের সমস্যা হতে থাকায় নানা নামে বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্যু,পাল্টা ক্যু, ক্ষমতা দখল লাগাতার চলেই আসছিল। শেষে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচিত একটা সরকার দাঁড় করালেও বড় দুটি আলাদা বিদ্রোহী দল তৈরি হয়। মুসলিম সমর্থিত এক্স সেলেকা এবং খ্রিস্টান সমর্থিত এন্টি বলাকা— এই দুই দলের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সহিংসতা চলছে প্রতিদিন। এই দেশে অফিশিয়াল দুটি ভাষা ফ্রেঞ্চ ও স্যাংগো। এ ছাড়া জাতিভিত্তিক নিজস্ব ভাষাও এরা ব্যবহার করে। গতকাল রাজধানীর বাংগি থেকে একমাত্র সড়ক ধরে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্থানীয়দের করুণ জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করা যায়। গাছে গাছে ঝুলে আছে সিঁদুর রঙা পাকা আম। খাওয়ার মানুষ নেই। তাদের খাবার, পোশাক, ভাষা, সবই একান্ত নিজস্ব। এদেশের জনগণের প্রধান খাদ্য হলো আলুর মতো কাসাভা থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার। এ ছাড়াও এরা সব প্রকার পশু, পাখি, জন্তু, পতঙ্গ সবই খেয়ে ফেলে। বানরও এদের প্রিয় খাদ্য। পাকা সড়কের পাশে কোথাও একটি দোতলা বাড়ি দেখা গেল না। মাঝে মাঝে ইটের দেয়াল দেওয়া টিনের ঘর। অধিকাংশই মাটির ঘর, ছনের ছাউনি। বিকালে প্রতিটি বাড়ির সামনে লাকড়ির চুলা জ্বলছে। শুধু আগুনের ব্যবহারটা জানে বলে আদিম মানুষ হয়তো বলা যাবে না তাদের। তবু বতমান সভ্যতা থেকে শত বছর পিছিয়ে আছে তারা। মানুষের জীবন যে কত কঠিন হতে পারে এখানে না এলে বোঝা যেত না। হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর কোনো স্বপ্ন নেই। আকাঙ্ক্ষা নেই। স্বপ্নহীন এই মানুষগুলো বাঁচে গড়ে ২৯ বছর। বিশাল ভূখণ্ড এদেশের মাত্র অর্ধকোটি মানুষকে খাবার দিতে পারছে না। অথবা বলা যায়, বিশাল এই দেশে স ষ্টার অনুগ্রহ সম্পদ আহরণ করতে পারছে না এই বিপন্ন মানুষরা। তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ অন্যেরা লুটে নিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে। তারা সেটা ঠেকাতেও পারছে না।

সর্বশেষ খবর