চারপাশে ঝোপঝাড়ের জঙ্গল। মাঝে পুরনো একতলা একটি ভবন। একসময় এই ভবনেই উৎপাদিত হতো ঐতিহ্যবাহী রেশম কাপড়। এখন সুনসান নীরবতা। সেই নীরবতা ভেঙে কিছুক্ষণের জন্য খট খট শব্দে ভরে উঠল চারপাশ। রেশম সুতা থেকে কাপড় বানানোর লুম মেশিনের শব্দ এটি। রাজশাহী রেশম কারখানার এই লুমগুলো সর্বশেষ চলেছিল ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর। তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করায় সেদিনের পর লুমের চাকাগুলো আর ঘোরেনি। তবে এবার সেই চাকা ঘোরালেন রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। রেশম কারখানা আবার চালু করতে গত বছর ২৩ নভেম্বর বৈদ্যুতিক সুইচ অন করে লুমটি পরীক্ষা করে দেখেন তিনি। আর ২৭ জুলাই রেশম কারখানার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পাঁচটি পাওয়ার লুমের মাধ্যমে কারখানাটির উৎপাদন শুরু করা হয়। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ও রেশম উন্নয়ন
বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ফজলে হোসেন বাদশা এ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করেন। এর আগে রেশম কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা লুমগুলো চালুর উপযোগী করে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় পুরনো লুমগুলোর মেরামতের কাজ। রাজশাহী রেশম কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন কারখানার পাঁচটি লুম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কারখানার সব লুমই চালু করা হবে। এর ফলে রেশমের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে রাজশাহীতে।
বন্ধ ঘোষণার আগে আশরাফুল ইসলাম টুটুল ২৪ বছর প্রধান মেকানিক হিসেবে রাজশাহী রেশম কারখানায় চাকরি করেছেন। কারখানা বন্ধের পর তিনি অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কারখানাটি চালু উপলক্ষে ফের ডেকে আনা হয়েছে দক্ষ এই কর্মীকে। আশরাফুল ইসলাম বলেন, কারখানাটি চালু হওয়ায় তিনি নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন রেশমের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসার। রেশম বোর্ডের সদস্য ও এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রেশম কারখানা খুলে দেওয়াটা রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। তিনি সেই দাবি পূরণ করে রাজশাহীর ঐতিহ্যকে রক্ষা করছেন। তিনি জানান, তুত চাষের উন্নয়নে ভারত থেকে ৩০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। সরকার দেবে আরও দুই কোটি টাকা। রেশমশিল্পকে এগিয়ে নিতে এ টাকা তুতচাষিদের ঋণ দেওয়া হবে। রেশম বোর্ডের সদস্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান বলেন, ‘কারখানার লুমগুলোর অবস্থা ভালো। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি চালু করা গেছে। বাকিগুলোও চালু করা সম্ভব। রাজশাহীকে আমরা সিল্ক হাব হিসেবে পরিচিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবেই রেশম কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।’ বোর্ডের আরেক সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, বন্ধ করার আগে কারখানাটিতে ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। বন্ধের পর সব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে যারা এখনো কাজ করতে পারেন, তাদের কারখানায় কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। লুমগুলো চালুর সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মীকে ডাকা হবে। রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। এক কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ২০০২ সালে সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। দীর্ঘদিন পর আবার সেই রেশম কারখানা চালু হয়েছে।