সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কান্না থামছে না নিখোঁজ পাঁচজনের পরিবারে

তিন যুবক খুন এখনো রহস্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ দিনেও খোঁজ মেলেনি দুই সহোদরসহ নিখোঁজ পাঁচজনের। থানা, ডিবি কার্যালয়, র‌্যাব কিংবা মর্গ জীবিত অথবা মৃত কোথাও তাদের সন্ধান নেই। কান্না থামছে না উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের। তবে পুলিশ বলছে, তাদের হেফাজতে নেই নিখোঁজ ৫ ব্যক্তি। অন্যদিকে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি গ্রহণ না করার অভিযোগ করেছে। এদিকে, ঢাকার পূর্বাচলে গুলিতে নিহত তিনজনের পরিবার এখনো হত্যার রহস্য জানতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সহোদর শাফিউল আলম ও মনিরুল আলমের কথা মনে হলেই অস্থির হয়ে পড়ছেন তাদের মা রমিছা খানম (৭৫) ও বাবা মোশারফ হোসেন (৯০)। নানা উৎকণ্ঠায় পাঁচ দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না। অনেকটা একই অবস্থা তাদের সঙ্গে একই রাতে নিখোঁজ হওয়া আবুল হায়াত, মোশারেফ হোসাইন মায়েজ ও শফিউল্লাহ্্র মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের। হাসপাতাল, আদালত, ডিবি অফিস, থানা কোথাও খুঁজতে বাদ রাখেননি তারা। প্রকৃতপক্ষে নিখোঁজ ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন, নাকি ডিবি পরিচয়ে তাদের অন্য কেউ তুলে নিয়ে গেছেন। তবে গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, তারা আমাদের হেফাজতে নেই। ওই পাঁচজনকে আমরা ধরিনি। তবে তারা নিখোঁজ রয়েছে বলে পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি।

তাদের খোঁজ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে আমরা তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আরও গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।’ নিখোঁজ মোশারেফ হোসেন মায়েজের বোন কামরুন্নাহার বলেন, শুনেছিলাম তাদের আজ (রবিবার) আদালতে তোলা হবে, সারা দিন আদালতে ছিলাম। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালত থেকেও তাদের কোনো সন্ধান পাইনি। ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়েছি। তবে কেউ আমাদের নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে, আমার ছোট ভাই ভিতরে আছে। ঢাকার নিম্ন আদালতে ছিলেন শাফিউল ও মনিরুলের বড় ভাই রাকিবুল আলম। তিনি বলেন, আমার ভাইরা অপরাধী নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে। ভাইরা টিউশনি করে লেখাপড়া করেছে। তারা কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তিনি বলেন, হজ পালন শেষে ৪০ দিন পর মাকে নিয়ে আমি দেশে ফিরে এসেই ভাইদের সঙ্গে খুশি মনে কথা বলছিলাম।  মা ও আমাকে আনতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিল সহোদর শিক্ষানবিস আইনজীবী শাফিউল আলম ও বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত মনিরুল আলম। বিমানবন্দর থেকেই ডিবি পরিচয়ে আমার দুই সহোদরসহ তাদের বন্ধু আবুল হায়াতকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়। ওই দিন এই তিন যুবককে সঙ্গে নিয়ে ডিবি পরিচয় দেওয়া ওই দলটি যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ ও একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোশারেফ হোসাইন মায়েজ নামে আরও দুজনকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর চার দিন পার হলেও এই পাঁচজনের আর খোঁজ মেলেনি।

ডিবি পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক গতকাল বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা উচিত নয়। হুটহাট করে গ্রেফতার করলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা হয় আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত সেসব অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা। এদিকে, ঢাকার পূর্বাচলে গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের লাশ নিয়ে এখনো রহস্য কাটেনি। কারা কেন কি কারণে তাদের হত্যা করেছে তা নিয়ে স্বজনদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকালও নিহত তিনজনের পরিবারে আহাজারি চলছিল। তারা যেন কিছুতেই মানতে পারছে না যে সোহাগ, শিমুল ও বাবু আর নেই। তাদের চোখের সামনে এখন কেবলই নৃশংস হত্যার চিত্র। পরিবারের দাবি, যারা তিনজনকে খুন করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।

সর্বশেষ খবর