সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দীর্ঘমেয়াদি ঋণের খোঁজে সরকার

বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই তাতে রেল চলবে এমন আশা ছিল সরকারের। সে কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পাশাপাশি সেতুর ওপর রেল সংযোগ নির্মাণে চীনের সঙ্গে পৃথক চুক্তিও হয়েছিল। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এই জটিলতা চলে টানা কয়েক বছর। শেষে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু তত দিনে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের অর্থায়ন জটিলতার কারণে সরকার নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় বড় প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেক সময় অর্থায়নকারী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলো প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অর্থ আটকে দেয়। ফলে নতুন করে আবার সেই প্রকল্প সাজাতে হয়। খোদ পদ্মা সেতু নির্মাণেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে কম ঝামেলা হয়নি। এ ধরনের ঝামেলা এড়াতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস খুঁজছে সরকার। সূত্রগুলো জানায়, দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও মূলধন বাজার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়নে সম্প্রতি একটি সভা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন এবং অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে একটি মতামত তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কার্যবিবরণীতে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী ওই সভায় বিশ্বব্যাংকের ফিনানশিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট এ কে এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশে বিদ্যমান বিশাল অবকাঠামো ঘাটতি পূরণ এবং সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, ফাইবার অপটিক ক্যাবলসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের অনেক প্রকল্প বেসরকারি খাতের মাধ্যমে করার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ব্যবস্থা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গৃহায়ণ ও শিল্পায়ন খাত উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অভাবে অনেকগুলো বড় প্রকল্প   বাস্তবায়নে অনেক বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এর মূল কারণ ব্যাংকনির্ভর বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কখনই পাঁচ-ছয় বছরের বেশি মেয়াদি ঋণ পাওয়া যায় না। কারণ ব্যাংক জনগণের আমানত থেকে কেবল ঋণ দিতে পারে। অন্যদিকে মূলধন বাজার বছরের পর বছর শুধু ইক্যুইটি শেয়ার-নির্ভর থাকে। কোনো ধরনের বন্ড বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক উপকরণ চালু হয়নি, যার মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা বা বৈদেশিক মুদ্রায় ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য ঋণ সংস্থান করা যাবে। এ অবস্থায় দেশে মূলধন বাজার, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি ঋণবাজারে গতিশীলতা আনতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ দরকার। সূত্রগুলো জানায়, সভায় দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার স্বপন কুমার বালা বলেন, দেশে মাত্র একটি সরকারি বন্ড রয়েছে, যা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের। এই বন্ডের কোনো কুপন রেট নেই, ডেডলাইন বলে ট্রেডিং চলমান রয়েছে। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির আরও সমন্বয় থাকা উচিত বলে তিনি সভায় মতামত দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, দেশে সরকারি বন্ডের কোনো সেকেন্ডারি মার্কেট নেই। বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সাবঅর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইডরা) প্রতিনিধি ড. এম মোশারফ হোসেন এফসিএ বলেন, নতুন সরকারি বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চলমান বড় প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতুর নামে বন্ড ইস্যু করে ডিভিডেন্ড দেওয়া যেতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়েরও প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারের কাছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি এ বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।’

 

সর্বশেষ খবর