মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বিরল বন্য বিড়াল

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

বিরল বন্য বিড়াল

ময়মনসিংহের ফুলপুরের সাহাপুর গ্রামের মহেশ দত্তের নাতি মলয় দত্ত সকালে গরু চরাতে মাঠে যাচ্ছিল। পাশের জঙ্গলেই  সে দেখতে পায় একটি কুকুরকে ধাওয়া করছে একটি বাঘ। চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘটনাস্থলে শত শত লোকের ভিড় জমে যায়। প্রশাসনের টনক নড়ে, মাইকিং করা হয় বাঘটিকে আক্রমণ অথবা মেরে না ফেলার জন্য। স্থানীয়দের দাবি, শত শত মানুষ এ খবরে গাছের নিচে জড়ো হলে দুই ঘণ্টা গাছে অবস্থান করে বাঘটি। পরে কিছু মানুষ চলে গেলে বাঘটি গাছ থেকে নেমে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। নির্মল দত্ত নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এর একদিন আগে সন্ধ্যায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে এই বাঘটির চেয়ে আরও বড় একটি বাঘ দেখেছেন। ওই কথিত বাঘের ছবি পাওয়া মাত্রই কৌতূহল জাগে এই প্রতিবেদকের। দুটি ছবিই পাঠানো হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের শিক্ষক ও গবেষক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদের কাছে। বাঘের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানান, এটি বিরল প্রজাতির বন্য বিড়াল। ইংরেজি নাম Snow Leopard। ধারণা করা হচ্ছে এটি পুরুষ। প্রায় ২০০ বছর আগে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জঙ্গলে এর দেখা মিলত।

এখন নেই বললেই চলে। এমনকি পুরো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যেসব জঙ্গল রয়েছে সেখানেও এদের দেখা পাওয়া দুষ্প্রাপ্য। ঠান্ডা, পাহাড়ি পরিবেশে বসবাসের জন্য উপযোগী এরা। বিলুপ্ত এই প্রাণীটির বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিয়ে ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই বিড়ালগুলো মাংস খায়। লেজ ৩১ থেকে ৪১ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। তার চোখের রঙ ফ্যাকাশে সবুজ বা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। ঠোঁট সংক্ষিপ্ত এবং কপাল গম্বুজ আকৃতির হয়। তিনি জানান, হুমকিপ্রাপ্ত এই বন্য বিড়াল যখন খাদ্য নিরাপত্তায়  ভোগে তখনই এরা দেশ অথবা স্থান ত্যাগ করে। তবে দেশ অতিক্রান্ত করার সময় এরা নির্দিষ্ট করিডর ব্যবহার করে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানে এসেছে। এই বিড়ালটির সঙ্গে তার মা-ও এসেছে। কারণ এরা পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় খাবারের সন্ধানে। আর পুরুষরা নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এদিকে মুক্ত বিশ^কোষ উইকিপিডিয়া ঘেঁটে জানা যায়, আউন্স (প্যান্থেরা অসিয়া) বা বড় বিড়াল যা মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ের রেঞ্জের অধিবাসী। এটি হুমকিপ্রাপ্ত প্রজাতির (আইইউসিএন) রেড লিস্টে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পরে গর্তে লুকিয়ে থাকা ওই দুটি বিড়ালকে উদ্ধার করে জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর