মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

পাহাড় সুরক্ষায় বিন্না ঘাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পাহাড় সুরক্ষায় বিন্না ঘাস

চট্টগ্রামে ভূমিক্ষয়, পাহাড় সুরক্ষা ও ধসের ঝুঁকি কমাতে বিন্না ঘাস প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এর আওতায় এরইমধ্যে আটটি পাহাড়ে তারা বিন্না ঘাস লাগিয়েছে। এ নিয়ে চসিক তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বর্তমানে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ মে নগরের টাইগার পাসের বাটালি হিল মিঠা পাহাড়ের পাদদেশে থাই রাজকুমারী মাহা চাকরি সিরিনধর্ন ‘ভেটিভার সেন্টার’ উদ্বোধন করেন। এ সেন্টারে পরীক্ষামূলক বিন্না ঘাস উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সেন্টারে কারিগরি সহায়তায় দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ। এ নিয়ে চসিক ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য চসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়ন’ শীর্ষক তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা নিরসনে মূল কারণ চিহ্নিত করতে হবে। চট্টগ্রাম পাহাড়ঘেরা। বৃষ্টি হলেই বালিমিশ্রিত মাটি নেমে নালা-নর্দমা ভরে যায়। ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়।

তাই এখন পাহাড়ে বিন্না ঘাস লাগানোর মাধ্যমে বালিমিশ্রিত মাটি নামা বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বিন্না ঘাস নিয়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জলবায়ু ফান্ড থেকে এটির অর্থায়ন করা হচ্ছে।’ চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক বিপ্লব দাশ বলেন, পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ের ক্ষয়রোধ, নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বর্ষা মৌসুমে স্বল্প সময়ে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট নগরে জলাবদ্ধতা নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশের মিশ্র প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা, জনদুর্ভোগ হ্রাস এবং সিল্ট ট্রেপ ড্রেন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমানোর জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে যা বিন্না ঘাস, বিদেশে এর নাম ভেটিভার। বিশ্বের শতাধিক দেশে নদী তীর ও বাঁধ রক্ষা, পাহাড় ধস এবং ক্ষয় ঠেকাতে এ ঘাস ব্যবহার করা হচ্ছে। চার থেকে ছয় মাসেই এ ঘাসের শেকড় মাটির ছয় থেকে ১০ ফুট গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর শেকড়ের সহন শক্তি ইস্পাতের ছয় ভাগের এক ভাগ। প্রতিকূল পরিবেশে সহজেই মানিয়ে নেওয়ার এবং টিকে থাকার ক্ষমতা আছে এই ঘাসের। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫০০ পাহাড় আছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন ২৮টি পাহাড়কে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বাস করছে ৬৮৪ পরিবার। কিন্তু এসব পাহাড়ে জীবনকে বাজি রেখেই, জীবনের মায়া বাদ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে পরিবারগুলো। প্রতি বছর বর্ষায় জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য বললেও তারা পাহাড়কে আখড়ে ধরে দিনাতিপাত করছেন। পক্ষান্তরে পাহাড়ঘেরা এই নগরে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে, হয় প্রাণহানি। ২০০৭ সালের ১০ জুন বিপর্যয়ের একটি সকালে একদিনেই পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সর্বশেষ খবর