শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে মহামায়া

মুহাম্মদ সেলিম, মিরসরাই থেকে ফিরে

কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে মহামায়া

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া খাল ছিল এলাকার জনসাধারণের গলার কাঁটা। এ খালের পানিতে তলিয়ে যেত ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। তাই এ খালকে ‘অভিশপ্ত’ মনে করতেন এলাকার মানুষ। কিন্তু সেই মহামায়া এখন আর অভিশাপ নয়, বড় রকমের আশীর্বাদ। মহামায়া খালের উৎসমুখে তৈরি করা বাঁধেই বদলে দিয়েছে সব কিছু। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক ‘মহামায়া’র ধারণ করা পানি এখন হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যলক্ষ্মী। এ উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১৮ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিতে চাষ হয় এই পানি দিয়ে। মিরসরাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, ‘মহামায়া সেচ প্রকল্পের কারণে ১৮ হাজার অনাবাদি জমিতে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। প্রতি বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছি। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।’ মহামায়া সেচ প্রকল্পের উপকারভোগী দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঘড়িয়াইশ গ্রামের কৃষক স্বপন নাথ বলেন, মহামায়া সেচ প্রকল্পের ফলে বর্তমানে আমরা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমাদের এলাকার কৃষকরা প্রতিবছর সময়মতো প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো চাষ করছে। দুর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, মহামায়া প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে আমাদের এলাকায় শত শত ঘরবাড়ি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকত। তখন এলাকার জনসাধারণ এ খালকে অভিশাপ মনে করত। কিন্তু এখন এ লেক এলাকার অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। জানা গেছে, এলাকার কৃষি উন্নয়ন ও জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থেমে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ফের এ প্রকল্প পূর্ণাঙ্গতা পায়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হয় মহামায়া সেচ প্রকল্প। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এলাকার কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে এ প্রকল্পটি। ১১ বর্গ কিলোমিটার লেকটি গত  ৮ বছর ধরে কৃষিকাজের চাহিদা জন্য পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। এ লেকের পানি দিয়ে কৃষিকাজ হচ্ছে ১৮ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিতে। ফলে লেকের কল্যাণে এখন  মিরসরাইয়ের তিন ইউনিয়ন মিরসরাই সদর, দূর্গাপুর এবং খৈইয়াছড়া এলাকার কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। মিরসরাই প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, মহামায়া লেককে পর্যটন এলাকা হিসেবে সমৃদ্ধ করতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মহামায়া ইকোপার্ক এলাকাকে আরও সমৃদ্ধ ও পর্যটক সুবিধা বাড়াতে নতুন করে ২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

 প্রকল্পটির আওতায় ২ হাজার একর বনভূমি ঘিরে তৈরি এ পর্যটন এলাকায় সংরক্ষণ করা হবে উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের সংযোগে স্থাপন করা হবে ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুইটি ঝুলন্ত সেতু, প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হবে তিনতলা বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ৭০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর, ২০০ মিটার অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি সড়ক, চারটি পিকনিক স্পট, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, পর্যটকদের জন্য শেড ও খাবার পানি সরবরাহ কেন্দ্র। সংস্কার করা হবে প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো। পর্যটকদের জন্য লেকের পানিতে থাকবে পরিবেশবান্ধব নৌকা। নির্মাণ করা হবে জলজ পক্ষীশালা। বাস্তবায়ন করা হবে ৫০ হেক্টর শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, ২০০ হেক্টর দেশীয় প্রজাতির ফলদ বৃক্ষ, ৫০ হেক্টর ঔষধি ও ২০০ হেক্টর এলাকায় বিলুপ্ত দেশীয় প্রজাতির বনায়ন। এছাড়া দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজমের নানা সুবিধা স্থাপনে ছোট ছোট নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

সর্বশেষ খবর