মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছয় বছরেও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি দুই মামলার

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি

আরাফাত মুন্না

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্পভবন দুর্ঘটনায় (রানা প্লাজা ধস) ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর বিচার ছয় বছরেও এগোয়নি। আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুই হয়নি। একই অবস্থা ইমারত আইনের মামলারও। শুধু দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রানা প্লাজা ভবন নির্মাণের অভিযোগে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।

ঢাকা জেলা পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রানা প্লাজা ভবন ধসে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুই বছর আগে ৪১ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শুরুর ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মামলা করলে আটজন আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশ আসে। এর ফলে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ আর শুরু করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ২০১৬ সালে ১৮ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শুরুর ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চারজন আসামি রিভিশন মামলা করেন। সেই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না। রানা প্লাজা ধসের ঘটনার হত্যা মামলার সর্বশেষ ধার্য তারিখেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের কাছে সময় চায়। এ মামলায় আগামী ২৩ মে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারাই উদ্যোগ নেবেন।’ এদিকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ইমারত আইনের মামলায় ২০১৬ সালের ১৪ জুন সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন চার আসামি। রিভিশন মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৬ জন। এ ঘটনায় পরদিন ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ ছাড়া নিহত পোশাকশ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলি আক্তার খুনের অভিযোগ এনে আদালতে নালিশি মামলা করেন। সাভার থানা পুলিশের করা মামলার সঙ্গে এই মামলাটির তদন্ত আদালতের নির্দেশে একসঙ্গে করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভবনধসের ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার। সাভার রানা প্লাজা ধসের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১ জুন হত্যা এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে হত্যা মামলায় রানা প্লাজার কর্ণধার সোহেল রানা, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাসহ ৪১ জনকে এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে, হত্যা মামলায় ৪১ জন আসামির মধ্যে কেবল রানা প্লাজার কর্ণধার সোহেল রানা কারাগারে আছেন। জামিনে আছেন ৩০ জন। পলাতক আছেন আটজন। মারা গেছেন দুই আসামি।

সর্বশেষ খবর