সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আসবাবপত্র ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত  জেলা-২ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা-২ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম ও সহকারী পরিচালক রতন কুমার পাল পর্যায়ক্রমে অধিদফতরের ৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা হলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস, উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কামরুল কিবরিয়া, প্রধান সহকারী আবদুল মালেক। তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হননি অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলম। চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা-২ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠানকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। কারণ এই আসবাবপত্র কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। আর সেই ফাইলে মহাপরিচালকসহ এই ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সই করেছেন। ফলে এখানে দুর্নীতি হয়েছে সেটা স্পষ্ট।

পরবর্তীতে দুদকের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অনুসন্ধান থেকে আমরা কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। এরপর কমিশন থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হবে আমরা সেই ব্যবস্থা নেব। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বিষয়ে আমার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমি যেন সহযোগিতা করি। আমি আগেও সহযোগিতা করেছি এখনো করব। তখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগে যারা দায়িত্বরত ছিলেন তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তার অনুপস্থিতির বিষয়ে বলেন, আমরা তার বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছি কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববান হতে হবে। আর যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে সেই দায়ভার তাদের নিতে হবে। তবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের যে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে সেখানে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। আসলে তদন্ত শেষ না হলে নিশ্চিত করে বলাটা মুশকিল। এজন্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করছি। দুর্নীতি করলে কেউ রক্ষা পাবে না। অন্যদিকে অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। কিংবা আমার সঙ্গে এই অভিযোগের কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই। তাহলে দুদক এর আগে একটি মামলায় আপনাকে কেন আসামি করল এবং এবার আবার কেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা দুদকই ভালো বলতে পারবে। কেন মামলা করেছে এবং এবার কেন আবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দুদক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আসবাবপত্র কেনার জন্য ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকার প্রশাসনিক অনুমোদনসহ বরাদ্দ চান। কিন্তু এই আসবাবপত্র কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাওয়া প্রস্তাব সুপারিশসহ অগ্রবর্তী করা হয়। নথিতে ওই ছয়জন কর্মকর্তা কর্মচারী সই করেন।

সর্বশেষ খবর