মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
মাহফুজ উল্লাহ স্মরণসভা

বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল দুপুরে প্রয়াত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ স্মরণে নাগরিক শোকসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এ দেশে স্বৈরাচার অনেকবার চেষ্টা করেছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে চিরস্থায়ী হতে। কিন্তু পারেনি। স্বৈরতন্ত্র যতই মনে করে টাকা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে, তারা চিরস্থায়ী হতে পারবে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ স্মরণে এই নাগরিক শোকসভা হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর বড়ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের পরিচালনায় নাগরিক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ আলম লেলিন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হোসেন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির  চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ জামির, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক দিলারা  চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, মেয়ে নুসরাত হুমায়রা প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।

ড. কামাল বলেন, ‘আমরা মুক্তির পথে আছি, আমরাই জয়ী হব। আসুন আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ি এবং সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগাই। যাতে মাহফুজ উল্লাহর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে মুক্তবুদ্ধিচর্চা ও লেখা কঠিন। কিন্তু মাহফুজ উল্লাহ তা পেরেছেন। গণতন্ত্রহীন অধিকারবিহীন রাষ্ট্রে মাহফুজ উল্লাহ সত্য কথা বলার মধ্য দিয়ে আমাদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আমাদের জেগে উঠতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহর সঙ্গে পরিচয় আমার অনেক দিনের। তিনি আজ থাকলে আমাদের সাহস দিতে পারতেন। আল্লাহ মাহফুজ উল্লাহর মতো একজন গুণী মানুষকে দিয়েছেন এজন্য আমাদের শুকরিয়া করতে হবে। আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, আইন নেই, মূল্যবোধ নেই। প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে, সব খবর পত্রিকায় আসে না। কোনো বিচার হচ্ছে না, দীর্ঘসূত্রতা। রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ তাড়াতাড়ি চলে যাবেন আমি ভাবিনি। তার অনেক বই আছে, অনেক লেখা আছে। তবে আমি বলব, একটি বইয়ের জন্য চিরজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তা হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস যেটা  গৌরবের ও ঐতিহ্যের।’ খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, এদেশের গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মুক্তচিন্তাচর্চার অধিকার তার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন।’

নুহ আলম লেলিন বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ ও আমি বলা যেতে পারে একই লক্ষ্যে দুই পথের যাত্রী। রাজনৈতিকভাবে আমরা দুই  মেরুর মানুষ। আমি ছিলাম মতিয়া গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের, সে ছিল মেনন গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের, আমি ছিলাম মস্কোপন্থি, সে ছিল পিকিংপন্থি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, মাহফুজ উল্লাহ মুখে হাসি  রেখেই অনেক সত্য কথা বলতেন। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সত্য কথা বলার সুযোগ নেই। মাহফুজ উল্লাহ সাহস করে অনেক কথা বলেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। আপাদমস্তক রাজনীতির চিন্তাধারায় পরিচালিত হতেন। যে কয়টা টকশোতে আমি তার সঙ্গে ছিলাম, আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে ধারণ করার পরও অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানোর অপরিসীম ভালোলাগা। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহর সাহসিকতা, সদাচারিতা, সুস্পষ্টবাদী চিন্তাভাবনা বক্তব্য উপস্থাপনার সক্ষমতা- এই গুণগুলো আমাদের তরুণদের আয়ত্তে আসুক এই আশা রাখি।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘মাহফুজ উল্লাহ ভাই এতই আত্মমর্যাদাশীল ছিলেন, ব্যক্তিত্ববান ছিলেন এবং কারও অনুগত ছিলেন না। এছাড়া  শোকসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শামা ওবায়েদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, তাবিথ আউয়াল, শায়রুল কবির খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিকল্পধারার শমসের মবিন চৌধুরী, সুজনের ড. বদিউল আলম মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর