বুধবার, ১৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ

জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতায় বন্ধ খনন কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদী জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতায় দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ খনন কাজ। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে। এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কোনো কারণ ছাড়াই নরসিংদী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে কাজ বন্ধ   রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘ তিন মাস ধরে নদী খনন কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বলেন, কিছু জায়গায় নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সীমানা নির্ধারণে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় নদ সরে গেছে, অনেক জায়গায় শুকনো চরে চলছে চাষাবাদ। এ-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। কিন্তু তাদের অসহযোগিতার কারণে এখনো সমাধান হয়নি। এজন্য বন্ধ রয়েছে নদী খনন কাজ। জানা গেছে, ৫৩টি নৌরুটের ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ইতিমধ্যে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুটসহ প্রকল্পের ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভৈরব-কটিয়াদী রুটে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদের ড্রেজিং কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। নদী খনন এলাকায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হয় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে। এর পর থেকে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। সারা দেশের অভ্যন্তরীণ ৫৩টি নৌরুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ২০১২ সালে ১৪ নভেম্বর একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন করে। প্রথম দফায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ খনন করার কথা রয়েছে। নদী খননের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল হবে। ২৪টি নৌরুটের মধ্যে নয়টি রুটের কাজ সমাপ্ত এবং ১৫টির কাজ চলছে। এর মধ্যে চারটি রুট বিভিন্ন প্রকল্পে ওভারল্যাপিং হওয়ায় প্রকল্প থেকে বাদ দিয়ে নতুন চারটি রুট অন্তর্ভুক্তি করে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ/পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে ৪০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হচ্ছে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাস থেকে স্থানীয়দের বাধার কারণে নৌপথ খননকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রমতে, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননকাজ এগিয়ে নেওয়রে লক্ষ্যে নদীর পয়স্তি ও সিকস্তি আইন অনুযায়ী বর্তমান নদী যে স্থানে আছে সেখানেই খনন করা হচ্ছে। নরসিংদীর বেলাব ও মনোহরদী উপজেলার ভৈরব-কটিয়াদী রুটে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সীমানা নির্ধারণ করে নদী খনন করা হচ্ছে। কিন্তু নতুনবাজার, রাঁধাখালী ও বিন্নবাইদে সীমানা নির্ধারণ না করে দেওয়ায় ১৫ জানুয়ারি থেকে নদী খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। তাই সমস্যাযুক্ত এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত নদী খননের কাজ শুরু করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি। জানা গেছে, প্রথম দফার ২৪টি নৌপথের মধ্যে নয়টি রুটের খননকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো-বরিশাল-ঝালকাঠি-বরগুনার পাথরঘাটা, ভৈরব বাজার-লিপসা-ছাতক-সিলেট, মোংলা-ঘষিয়াখালী, খুলনা-গাজীরহাট-বরদিয়া-মানিকদা, দিলালপুর-ঘোড়াডিঙ্গা-চামড়াঘাট-নিকলী-আটপাড়া-নেত্রকোনা, ঢাকার মিরপুর-সাভার নৌপথ ও সৈয়দপুর-বান্দুরা নৌপথ, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন, ভৈরব (নরসিংদী)-কটিয়াদী ও শ্রীপুর-ভোলা খোয়াঘাট-গঙ্গাপুর নৌপথ খননকাজ শেষ হয়েছে। নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে এনে দেশের আবহমান ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য নেওয়া হয়েছে ৫৩টি নৌপথ খনন প্রকল্প। এই প্রকল্পে ‘মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট গোপালগঞ্জ নৌপথ খনন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের মাদারীপুর থেকে মোস্তফাপুর পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার, চরমুগুরিয়া থেকে ওআইসি পলি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার, লোয়ার কুমার নদীর মোস্তফাপুর থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং মধুমতী নদীর টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার নৌপথের খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুরের রাস্তী ইউনিয়নের রূপরাইয়া এলাকায় নদী খননের পলি মাটি লক্ষ্মীগঞ্জ, রূপরাইয়া নামক বাঁওড়ে ফেলার ফলে বাঁওড়ের প্রায় ৭৫-৮০ একর অনাবাদি জমিকে আবাদি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া, টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জ নৌপথের আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদ খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা রক্ষা, বোরো সেচের উপযুক্ত পরিবেশ ও নৌ-চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জে নৌপথ ছিল। ছিল নৌ-সার্ভিস। কিন্তু তা একেবারে অতীত হয়ে গিয়েছিল। কালের বিবর্তনে কুমার নদের তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে নাব্যতা। ফলে এ অঞ্চলের একসময়ের পাটশিল্প ও পাট বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ঐতিহ্যবাহী চরমুগুরিয়া বন্দর সুখ্যাতিও হারিয়ে ফেলে। তাই প্রকল্পটি সম্পন্ন বাস্তবায়ন হলে নৌযান চলাচল করে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে এলাকাবাসীর আশা। রাজৈর ও টেকেরহাট উপজেলার মোস্তফাপুর, আপাসী, কবিরাজপুর, হরিদাসদী, শাখারপাড়, হাসানকান্দি, টেকেরহাট, বোলতলী, কংসুর গঙ্গারামপুর, কলিগ্রাম জলিলপাড়, মানিকদাহসহ প্রায় ২২টি গ্রামের প্রায় এক কোটি মানুষের উপকার হবে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

সর্বশেষ খবর