সোমবার, ২০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

চার কৌশলে কার্যকর হবে ভ্যাট আইন

কমানো হচ্ছে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চার কৌশলে কার্যকর হবে ভ্যাট আইন

আগামী বাজেটে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে ৪টি কৌশল বিবেচনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এগুলো হলো- (১) ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাক্ষমতা হ্রাস, (২) বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি, (৩) ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারিত করে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা এবং (৪) সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কারের মাধ্যমে ভ্যাট ব্যবস্থার পদ্ধতি আরও সহজ করা। 

আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট তৈরি করা হচ্ছে সেখানে তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই ৪টি বিষয় উল্লেখ করেছে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, এনডিসি গত ১৩ মে এই প্রতিবেদনটি পাঠান।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগেই বলেছেন, আগামী বাজেট অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন।  সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯১ সালের আইনে সব ধরনের কর কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তারা যে কোনো পণ্য ও সেবাকে করের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন, তাদের টার্নওভার যা-ই হোক না কেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে নতুন ভ্যাট আইনে কর কর্মকর্তাদের সে ক্ষমতা হ্রাস করা হবে। শুধু তামাক ছাড়া সবার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। এ ছাড়া নতুন ভ্যাট আইনে মৌলিক খাদ্য ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুসহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ করের আওতার বাইরে থাকছে। যেসব খাত সরকারের নীতিগত সহায়তা পাচ্ছিল, সেগুলো অব্যাহত থাকবে।

অর্থ বিভাগে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে এনবিআর চেয়ারম্যান ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা হ্রাস করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাব চেয়ে ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ের শুল্ক ও ভ্যাট দফতর এবং দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে মতামত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারির পাশাপাশি আইনি সংস্কারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ভ্যাট কর্মকর্তা অনুমোদিত উদ্দেশ্যে, নোটিস প্রদানের মাধ্যমে, যে কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য; বা কোনো ব্যক্তির কর্তৃত্বে থাকা দলিলাদি বা সাক্ষ্য-প্রমাণ দাবি করতে পারে। ভ্যাট কর্মকর্তারা যে কোনো রেকর্ডপত্রের প্রতিলিপি, জব্দ, সিল এবং নির্ধারিত ক্ষেত্রে ও পদ্ধতিতে, যে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আটকে দিতে পারে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্থান, অঙ্গন, ঘরবাড়ি, যানবাহন ইত্যাদিতে প্রবেশ ও তল্লাশির ক্ষমতাও রয়েছে ভ্যাট কর্মকর্তাদের। ভ্যাট প্রদানে ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানা বা অর্থদে র ক্ষমতাও রয়েছে তাদের।

সূত্র জানায়, ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে। আগে রাজস্ব কর্মকর্তারা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- দিতে পারতেন, ওই বাজেটে বাড়িয়ে তা ৪ লাখ টাকা করা হয়। অন্যদিকে ভ্যাট আইনে নতুন দফা সংযোজনের মাধ্যমে ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক এক্সচেঞ্জ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় ভ্যাট কর্মকর্তাদের। তবে রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট কর্মকর্তাদের এই স্বেচ্ছা ক্ষমতাকে এক ধরনের হয়রানি বলে অভিহিত করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। যখন তখন ভ্যাট কর্মকর্তাদের তল্লাশি চালানোসহ হয়রানিমূলক বিভিন্ন ক্ষমতা কমানোর জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গত কয়েকবছর ধরে বাজেটে প্রস্তাব দিয়ে আসছে।

এফবিসিসিআই-এর উপদেষ্টা ও ভ্যাট আইন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু ভ্যাট আইন নয়, সব ধরনের শুল্ক আইনে কর কর্মকর্তাদের অঢেল ক্ষমতা দেওয়া আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হয়। যেমন : আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবের খাতা-পত্র জব্দ করতে হলে আগে নোটিস পাঠাতে হবে, কর কর্মকর্তারা কোনো রকম নোটিস ছাড়াই খাতাপত্র নিয়ে যায়। ইচ্ছে হলেই যে কোনো প্রতিষ্ঠানে অডিট টিম পাঠিয়ে দেয়। টাকা ছাড়া কারও নিবন্ধন করা হয় না। ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের দাবি হলো- যারা কর ফাঁকি দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনে যতটুকু বলা আছে, কর প্রশাসন যেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। ব্যবসায়ীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়।

এ বিষয়ে এনবিআর-এর সদস্য (ভ্যাট, পলিসি) ড. আবদুল মান্নান শিকদার বলেন, সঠিকভাবে কর আদায় করতে সব ধরনের কর কর্মকর্তার কিছু জুডিশিয়ারি ক্ষমতা রয়েছে। সে হিসেবে ভ্যাট কর্মকর্তারাও আইনের মধ্যে থেকেই তাদের নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, ২০১২ সালের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতার বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন নতুন ভ্যাট আইন আরও সহজ করার পাশাপাশি ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা হ্রাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর